পাতা:এখন যাঁদের দেখছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আঠারো

সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়

 বোধ হয় সেটা ১৩২০ (কিম্বা ১৩২১ সাল)। আমি তখন আড়ালে থেকে “যমুনা” পত্রিকা সম্পাদন করছি—যদিও ছাপার হরফে সম্পাদক ব’লে পরিচিত ছিলেন স্বর্গীয় ফণীন্দ্রনাথ পাল

 সেই সময়ে সৌরীন প্রায়ই আসতেন “যমুনা” কার্যালয়ে। মূর্তি দৃষ্টি আকর্ষণ করে। অশ্রান্ত গল্পগুজবে আসর মুখরিত ক’রে রাখেন। পেশায় পুলিশ কোর্টের উকিল। কিন্তু ওকালতির চেয়ে টান বেশী সাহিত্যের দিকেই। তাই পুলিশ কোর্টে তাঁর মন টিকত না। যখন তখন সেখান থেকে পিঠটান দিয়ে তিনি মেলামেশা করতে যেতেন সাহিত্যিকদের সঙ্গে।

 “যমুনা” কার্যালয়ে সৌরীনের সঙ্গে আমার চোখাচোখি হ’ত বটে, কিন্তু কথা বলাবলি হ’ত না। তিনি আসতেন, আর পাঁচজনের সঙ্গে কথাবার্তা কইতেন, আমি চুপ ক’রে ব’সে ব’সে শুনতুম।

 সৌরীনের আসল পরিচয় পেয়েছিলুম আরো কয়েক বৎসর আগে। “ভারতী”তে ছোট গল্পে বিশেষ নৈপুণ্য দেখিয়ে তিনি তখনকার একজন শক্তিশালী উদীয়মান লেখক ব’লে খ্যাতিলাভ করেছিলেন। ঝরঝরে হালকা ভাষা, সরল এবং মধুর। রচনাভঙ্গিটিও আমার খুব ভালো লাগত এবং আজও লাগে—কারণ তাঁর ভাষা এখনো দরিদ্র হয়ে পড়েনি। এবং সেই সময়েই তিনি সাহিত্যজগৎ থেকে নাট্য-জগতেও দৃষ্টিপাত করতে ছাড়েন নি। ১৯০৮ ও ১৯১০ খৃষ্টাব্দে ষ্টার থিয়েটারে সুখ্যাতির সঙ্গে অভিনীত হয় তাঁর দ্বারা রচিত দুখানি কৌতুক নাট্য- “যৎকিঞ্চিৎ” ও “দশচক্র”।

 কথাশিল্পী শরৎচন্দ্রের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক প্রথম বয়স থেকেই। ভাগলপুরে ব’সে শরৎচন্দ্র একটি তরুণ লেখকদের দল গ’ড়ে

১৪৮

সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়