তুলেছিলেন। তখন শরৎচন্দ্রের নামও কেউ জানত না এবং কেউ চিনত না সেই সব তরুণকে। তাঁদের নাম হচ্ছে স্বর্গীয়া নিরুপমা দেবী, স্বর্গীয় গিরীন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়, শ্রীউপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় ও শ্রীসুরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় প্রভৃতি। ভাগলপারের দল যে হাতেলেখা পত্রিকায় লেখনী চালনা করতেন, তার নাম ছিল “ছায়া”। শরৎচন্দ্রের উঠতি বয়সের বহু রচনাই পরে “ছায়া” পত্রিকার অঙ্ক ছেড়ে প্রকাশ্য সাহিত্যক্ষেত্রে এসে দেখা দিয়েছে।
সৌরীনের বাড়ী কলকাতায়, কাজেই ভাগলপুরে তিনি স্থায়ী হ’তে পারেন নি। উপেন্দ্রনাথও কলকাতায় চ’লে আসেন। কিন্তু এখানে এসেও তাঁরা সাহিত্যের নেশা ছাড়তে পারলেন না। সাহিত্যচর্চায় উৎসাহী আরো কয়েকজন তরুণকে নিয়ে গঠন করলেন “ভবানীপুর সাহিত্য সমিতি”। এখানকার হাতে-লেখা পত্রিকার নাম হ’ল “তরণী”।
“ছায়া” ও “তরণী” করত গুরু-শিষ্যের সংবাদবহন। ডাকযোগে তারা আনাগোনা করত কলকাতায় এবং ভাগলপুরে। পরস্পরকে কঠিন ভাষায় ভর্ৎসনা করতেও ছাড়ত না।
তারপর আদ্যলীলার আসর ছেড়ে সৌরীন এসে যোগ দিলেন “ভারতী”র সঙ্গে। তখন সরলা দেবী ছিলেন “ভারতী”র সম্পাদিকা। কিছু কাল দক্ষ হস্তে পত্রিকা চালিয়ে বিবাহ ক’রে তাঁকে পাঞ্জাবে চ’লে যেতে হয়। সেই সময়ে সৌরীন কলকাতায় থেকে সরলা দেবীর নির্দেশ অনুসারে “ভারতী”র কাজ চালিয়ে যেতেন।
তারপর সৌরীন যে কীর্তি স্থাপন করলেন, বাংলা সাহিত্যের দরবারে তা হচ্ছে একটি বিশেষরূপে উল্লেখ্য ঘটনা।
সাহিত্যসাধনা ছেড়ে শরৎচন্দ্র তখন রেঙ্গুনে গিয়ে হয়েছেন মাছিমারা কেরানী। তাঁর নিজের মুখেই প্রকাশ, “এর পরেই সাহিত্যের সঙ্গে হলো আমার ছাড়াছাড়ি, ভুলেই গেলাম যে জীবনে একটা ছত্রও কোনোদিন লিখেছি। দীর্ঘকাল কাটলো প্রবাসে—ইতিমধ্যে কবিকে (রবীন্দ্রনাথ) কেন্দ্র ক’রে কি ক’রে যে নবীন বাঙ্গলা সাহিত্য দ্রুতবেগে সমৃদ্ধিতে ভ’রে উঠলো আমি তার কোনো খবরই জানিনে।”
১৪৯