পাতা:এখন যাঁদের দেখছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
এখন যাঁদের দেখছি

 শরৎচন্দ্র নিরুদ্দেশ। কিন্তু তাঁর রচনার পাণ্ডুলিপিগুলি যে শ্রীসুরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের জিম্মায় আছে, সৌরীন এ খবরটা জানতেন। সুরেন্দ্রনাথের কাছ থেকে তিনি “বড়দিদি” উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি আনিয়ে শরৎচন্দ্রের অজ্ঞাতসারেই “ভারতী”তে তিন কিস্তিতে ছাপিয়ে দিলেন (১৯০৭ খৃঃ)। তার ফলেই শরৎচন্দ্রের রচনার সঙ্গে হয় জনসাধারণের প্রথম পরিচয় সাধন। শরতের চাঁদের মুখ থেকে মেঘের ঘোমটা প্রথম খুলে দেন সৌরীন্দ্রমোহনই। এজন্যে তিনি অভিনন্দন পেতে পারেন।

 তারপর কেটে গেল আরো কয়েক বৎসর। শরৎচন্দ্র অজ্ঞাতবাসে। সাহিত্য নিয়ে নেই তাঁর কিছুমাত্র মাথাব্যথা। ১৯১২ খৃষ্টাব্দে কিছুদিনের জন্যে ছুটি নিয়ে তিনি কলকাতায় ফিরে এলেন।

 সে সময়ে ফণীন্দ্রনাথ পাল চালাচ্ছেন “যমুনা” পত্রিকা, তার সঙ্গে তখনও আমার সম্পর্ক স্থাপিত হয় নি। শ্রীউপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় ও শ্রীসৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায় পত্রিকা চালনায় ফণীবাবুকে সাহায্য করতেন। তাঁরা দুজনেই শরৎচন্দ্রকে ধ’রে বসলেন, “যমুনা”র জন্যে আবার লেখনী ধারণ করতে।

 সৌরীন লিখেছেনঃ “যমুনা-সম্পাদক ফণীন্দ্র পাল আমায় ধরিয়াছেন—যে ‘যমুনা’কে তিনি জীবন-সর্বস্ব করিতে চান, আমার সহযোগিতা চাহেন। শরৎচন্দ্র আসিলে তাঁকে ধরিলাম—এই যমুনার জন্য লিখিতে হইবে।”

 শরৎচন্দ্র বলিলেন—একখানা উপন্যাস ‘চরিত্রহীন’ লিখিতেছি। পড়িয়া দ্যাখো চলে কি না।

 প্রায় পাঁচ আনা অংশ লেখা ‘চরিত্রহীনে’র কাপি তিনি আমার হাতে দিলেন। পড়িলাম। শরৎচন্দ্র কহিলেন— নায়িকা কিরণময়ী। তার এখনো দেখা পাওনি। খুব বড় বই হইবে।

 ‘চরিত্রহীন’ যমুনায় ছাপা হইবে স্থির হইয়া গেল। তিনি অনিলা দেবী ছদ্ম নামে ‘নারীর মূল্য’ আমায় দিয়া বলিলেন— আমার নাম প্রকাশ করিয়ো না। আপাতত যমুনায় ছাপাও।

 তাই ছাপানো হইল। তারপর দিলেন গল্প—“রামের সুমতি”।

১৫০