পাতা:এখন যাঁদের দেখছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ী

নিয়মেই থাকে খাঁটি বাঙালীর সহজাত সংস্কার। তাঁদের বৈঠকথানায় বা ড্রয়িংরুমে বাংলার সেকেলে গানগুলি প্রবেশ করবার পথ খুঁজে পেত না, কিন্তু ওস্তাদী তানা-না-নাও সহ্য করতে তাঁরা ছিলেন নিতান্ত নারাজ। এই দোটানার মধ্যে দুই কূল রাখবার ব্যবস্থা করলেন ঠাকুরবাড়ীর সঙ্গীতাচার্য। আধুনিক যুগের উপযোগী উচ্চতর ও সুক্ষতর কাব্যকথাকে ফুটিয়ে তোলা হ’তে লাগল এমন সব সুরের সংমিশ্রণে, যার মধ্যে আছে একাধারে মার্গসঙ্গীত, বাউল-সঙ্গীত, কীর্তন-সঙ্গীত ও লোক-সঙ্গীতের বিশেষত্ব। এই নতুন পদ্ধতিতে গায়ক কোথাও কথার গতিরোধ ক’রে অযথা দীর্ঘ তান ছাড়বার সুযোগ পান না এবং কবিও কোথাও সুরকে অবহেলা না ক’রে তার সাহায্যেই কথার ভাবকে উচিতমত প্রকাশ করবার চেষ্টা করেন। আজ সর্বত্র প্রচারিত হয়ে গিয়েছে এই নূতন পদ্ধতির বাংলা গান এবং এ গান উপভোগ করতে পারেন উচ্চশিক্ষিতদের সঙ্গে অল্পশিক্ষিত শ্রোতারাও।

 সাহিত্যকলা, চিত্রকলা ও সঙ্গীতকলার পরে আসে নাট্যকলার কথা। এ ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের অগ্রনায়কদের সঙ্গে দেখি ঠাকুরবাড়ীর গুণিগণকে। যে কয়েকটি সৌখীন বাংলা রঙ্গালয়ের আদর্শে এদেশে সাধারণ নাট্যশালা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ীর রঙ্গালয় হচ্ছে তাদের মধ্যে অন্যতম। গিরীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর ও গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রভৃতি ছিলেন তার প্রধান কর্মী। তারপরেও ঠাকুরবাড়ীর সন্তানদের মধ্যে নাট্যকলার ধারা ছিল সমান অব্যাহত। অভিনেতারূপে দেখা দেন রবীন্দ্রনাথ, গগনেন্দ্রনাথ, সমরেন্দ্রনাথ, অবনীন্দ্রনাথ, দিনেন্দ্রনাথ ও রথীন্দ্রনাথ প্রভৃতি আরো অনেকেই। মধ্য যৌবন থেকেই দেখছি, ঠাকুরবাড়ী থেকে প্রায় প্রতি বৎসরেই এক বা একাধিক নাট্যানুষ্ঠানের আয়োজন হয়ে আসছে। আজ রবীন্দ্রনাথ, গগনেন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথ পরলোকে। কিন্তু আজও রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরবাড়ীর ধারা অক্ষুণ্ণ রেখেছেন; প্রায়ই এখানে ওখানে নাট্যানুষ্ঠানের আয়োজন করেন। নাট্য-জগতেও ঠাকুর পরিবারের তুলনা নেই।

 আর একটি উল্লেখযোগ্য কথা। আমার বোধ হয়, কলকাতা