প্রত্যহ যেতুম বটে, কিন্তু পত্রিকা পরিচালনার সঙ্গে আমার কোন সংস্রব ছিল না। আমি ছিলুম “জাহ্নবী”র নিয়মিত লেখক। যে তরুণদের দলটি নিয়ে “জাহ্নবী”র বৈঠকটি গঠিত হয়, তাঁদের মধ্যে সাহিত্যক্ষেত্রে আমিই ছিলুম তখন সবচেয়ে অগ্রসর, কারণ সে সময়ে “ভারতী”, “প্রবাসী”, “সাহিত্য”, “নব্যভারত”, “মানসী”, “অর্চনা” ও “জন্মভূমি” এবং অন্যান্য বহু পত্রিকায় আমার অনেক প্রবন্ধ, গল্প ও কবিতা প্রকাশিত হ’ত।
মনে ছিল তখন ভবিষ্যতের কত সম্ভাবনার ইঙ্গিত, সাহিত্যের রূপকথাই ছিল আমাদের আনন্দের একমাত্র সম্বল। সাহিত্যের মাদকতা আমাদের মত্ত ক’রে তুলেছিল এবং সে নেশার ঘোর আজও কাটেনি। তখনও পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যের উপরে বঙ্কিমচন্দ্রের যথেষ্ট প্রভাব বিদ্যমান ছিল, যদিও তখনকার অধিকাংশ উদীয়মান সাহিত্যিকের গুরুস্থানীয় ছিলেন রবীন্দ্রনাথই। নাট্যসাহিত্যে চলছে তখন দ্বিজেন্দ্রলালের গানের যুগ। “বিন্দুর ছেলে” ও “রামের সমতি” প্রভৃতি গল্প বোধ হয় তখনও বেরোয়নি কিম্বা সবে বেরিয়েছে, কিন্তু সুপরিচিত লেখক হিসাবে জনসাধারণের বা আমাদের মনে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কোন স্থানই ছিল না।
বয়সে ছিলুম সকলেই তরুণ, বয়সের ধর্মকে অস্বীকার করতেও পারতুম না। ঝোঁকের মাথায় প্রায়ই তুমুল তর্কাতর্কির ঝড়ের ভিতরে গিয়ে পড়তুম। এখন সেই বালকতার কথা মনে করলেও হাসি পায়, কিন্তু তখন সেই তর্কের হার-জিতের উপরে নির্ভর করত যেন আমাদের সমস্ত মানসম্ভ্রম। দু পক্ষের একমাত্র লক্ষ্য থাকত, সুযুক্তি বা কুযুক্তির সাহায্যে যেমন ক’রেই হোক প্রতিপক্ষের মুখ বন্ধ করা। কিন্তু মুখ তো বন্ধ হ’তই না, বরং আরো বেশী ক’রে খুলে যেত।
একবার তর্ক বাধল বঙ্কিমচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথকে অবলম্বন ক’রে। একপক্ষে ছিলুম প্রেমাঙ্কুরের সঙ্গে আমি এবং অন্য পক্ষে প্রভাতচন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়। অন্যেরা থাকতেন মধ্যস্থের মত। বাকবিতণ্ডা চরমে উঠলে উত্তেজিত হয়ে তারস্বরে চীৎকার করতুম আমরা তিনজনেই। তর্ক শুরু হ’ত সন্ধ্যার আগে “জাহ্নবী” কার্যালয়ে। সন্ধ্যার পর
১৫৬