শিশিরকুমারের চারি পাশে এসে দাঁড়ালেন ললিতমোহন লাহিড়ী, যোগেশচন্দ্র চৌধুরী, বিশ্বনাথ ভাদুড়ী, তুলসীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, শৈলেন চৌধুরী, অমিতাভ বসু, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, রবি রায় ও জীবন গঙ্গোপাধ্যায় প্রভৃতি। লুপ্ত হয়ে গেল বাংলা রঙ্গালয়ের গতানুগতিক ধারা। নতূন স্রোত এল পুরাতন খাতে। সেই স্রোত এখনো চলছে। তখনকার নবীনরা আজ হয়েছেন প্রবীণ। অনেকে পরলোকে গিয়েছেন। তাঁদের স্থান গ্রহণ করেছেন নূতন নূতন শিল্পী। সৌভাগ্যক্রমে এখানকার সর্বাগ্রগণ্য ও সৃষ্টিক্ষম দুইজন শিল্পী আজও সক্রীয় অবস্থায় আমাদের মধ্যে বিদ্যমান। ওঁদের একজন হচ্ছেন শিশিরকুমার, আর একজন অহীন্দ্র চৌধুরী।
নবযুগের অধিকাংশ অভিনেতার মত অহীন্দ্রেরও হাতে খড়ি হয়নি সাধারণ রঙ্গালয়ে। তাঁরও নাট্যসাধনা শুরু হয়েছিল শৌখীন নাট্যজগতেই। কেবল তাই নয়। পেশাদার রঙ্গালয়ে মঞ্চাভিনয়ে যোগ দেবার আগেই তিনি চলচ্চিত্রের পর্দাতেও দেখা দিয়ে নিজের নৈপুণ্য প্রকাশ করেছিলেন। অধুনালুপ্ত বিখ্যাত মাসিক পত্রিকা “কল্লোলে”র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও ডাঃ কালিদাস নাগের ভ্রাতা স্বর্গীয় গোকুলচন্দ্র নাগ প্রভৃতির চেষ্টায় “ফোটো প্লে সিণ্ডিকেট অফ ইণ্ডিয়া” নামে একটি চিত্র-প্রতিষ্ঠান গঠিত হয়। তার প্রথম ছবির নাম “সোল অফ এ স্লেভ”। নায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন অহীন্দ্র চৌধুরী। তাঁর অভিনয় বেশ উতরে গিয়েছিল।
সাধারণ রঙ্গালয়ে তাঁর প্রথম ভূমিকা হচ্ছে “কর্ণার্জুন” নাটকে অর্জুন। প্রথম আবির্ভাবেই তিনি বিশেষভাবে আকৃষ্ট করেছিলেন প্রত্যেক দর্শকের দৃষ্টি। দীর্ঘ, সুঠাম ও বলিষ্ঠ দেহ এবং সুশ্রী মুখ, নায়কের উপযোগী আদর্শ চেহারা। গম্ভীর, উদাত্ত ও ভাবব্যঞ্জক কণ্ঠম্বর। গলায় স্বরের খেলায় বেশী বৈচিত্র্য না থাকলেও ভাবের অভিব্যক্তি প্রদর্শিত হয় কৌশলে। সংলাপ ও অঙ্গহারের মধ্যে সম্পূর্ণ নিজস্ব ভঙ্গির স্পষ্ট পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি যে একজন জাত-অভিনেতা এবং পরিপক্ক শক্তি নিয়েই রঙ্গমঞ্চে দেখা দিয়েছেন, তাঁর প্রথম আত্মপ্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই সকলে সে কথা উপলব্ধি করতে পেরেছিল।
১৬২