অদূর ভবিষ্যতেই তিনি নাম কিনবেন, এটুকু অনুমান করতে আমার বিলম্ব হয়নি। নাট্যজগতে নিজেকে আমি ‘ভেটার্যান’ দর্শক ব’লে মনে করতে পারি (ভেটার্যান অভিনেতা যদি থাকতে পারে, তবে ভেটার্যান দর্শকই বা থাকবে না কেন?)। বাল্যকাল থেকে আজ পর্যন্ত অভিনয় দেখে দেখে মাথার চুল পাকিয়ে ফেললুম, একবার দেখলেই চিনতে পারি ভালো অভিনেতাকে। তাই অহীন্দ্র চৌধুরীকেও চিনতে বিলম্ব হয়নি।
কিন্তু একজন উঁচুদরের চৌকস শিল্পীকে যাচাই করতে হ’লে অর্জুন ভূমিকাটি বেশী কাজে লাগবে না। শিপীর শ্রেষ্ঠতার আদর্শ কি, তিনি কতটা উঁচুতে ও কতটা বৈচিত্র্য দেখাতে পারেন, সে প্রমাণ পেতে গেলে দরকার অন্য রকম ভূমিকার। “কর্ণার্জুনে”র পর অহীন্দ্র আরো কোন কোন নাটকে দেখা দেন। প্রতিবারেই করেন উল্লেখযোগ্য অভিনয়। কিন্তু সে সব ক্ষেত্রেও তাঁর যথার্থ শক্তি সম্বন্ধে সম্যক ধারণা করতে পারিনি।
তারপরেই হ’ল তাঁর প্রকৃত আত্মপ্রকাশ। উপর উপরি রবীন্দ্রনাথের দুইখানি নাটকে ("চিরকুমার সভা” ও “গৃহপ্রবেশ”) তিনি যথাক্রমে গ্রহণ করলেন চন্দ্র ও যতীনের ভূমিকা। দুটি ভূমিকাই সম্পূর্ণরূপে পরস্পরবিরোধী। একটি হাস্যতরল ও আর একটি অশ্রুসজল। চন্দ্রবাবু নিজে হাসেন না, বরং গম্ভীর হয়েই থাকেন, কিন্তু লোকে তাঁর ভাবভঙ্গি, চলনবলন, অন্যমনস্কতা ও মুদ্রাদোষ প্রভৃতি দেখে হেসে খায় লুটোপুটি। অনেকটা এই শ্রেণীর অধ্যাপককে বাস্তবজীবনেও আবিষ্কার করা অসম্ভব হবে না। চন্দ্রের ভূমিকায় অহীন্দ্রের অপরূপ অভিনয় নাট্যজগতে কেবল আলোড়ন ও উত্তেজনা সৃষ্টিই করলে না, সেই সঙ্গে সকলকে দেখিয়ে দিলে কতখানি উন্নত শক্তির অধিকারী তিনি। ভূমিকার উপযোগী প্রকৃতি-নির্দেশক রঙ্গসজ্জার দ্বারাও তিনি দর্শকদের করলেন চমৎকৃত।
তারপর যতীনের ভূমিকা। অত্যন্ত কঠিন ভূমিকা। কেবল সুকঠিন নয়, বাংলা রঙ্গালয়ের এমন নূতন রকম ভূমিকা আর কখনো দেখা যায় নি—আগেও না, পরেও না। একটিমাত্র দৃশ্য,
১৬৩