পাতা:এখন যাঁদের দেখছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
এখন যাঁদের দেখছি

সহরে সর্বপ্রথমে মহিলা নিয়ে অভিনয়ের প্রথা প্রবর্তিত হয় ঠাকুর- বাড়ীর রঙ্গমঞ্চেই। অভিনেয় নাটিকা ছিল “বাল্মীকি প্রতিভা”।

নৃত্য যে একটি নির্দোষ আর্ট এবং শিক্ষিত ও ভদ্র পুরুষ আর মহিলারা যে অম্লানবদনে নাচের আসরে যোগ দিতে পারেন, বাংলা- দেশে এ বাণী অসঙ্কোচে প্রথম প্রচার করেন ঠাকুরবাড়ীর রবীন্দ্রনাথই। তিনি কেবল প্রচার করেই ক্ষান্ত হননি, নিজে হাতে ধরে ছেলেমেয়েদের নামিয়েছিলেন নাচের আসরে। সঙ্গে সঙ্গে বাংলা নৃত্যকলা জাতে উঠল তাঁর হাতের পবিত্র স্পর্শে।

অলিগলির দ্বারা পরিবেষ্টিত বটে জোড়াসাঁকোর এই ঠাকুরবাড়ী, কিন্তু তার ফটক পার হ'লেই সংকীর্ণতার কোন চিহ্নই আর নজরে পড়ে না। সামনেই প্রশস্ত প্রাঙ্গণ, তারপর ত্রিতল অট্টালিকার ভিতরেও আর একটি বড় অঙ্গন। বামদিকে রবীন্দ্রনাথের বিচিত্রাভবন, তারও পশ্চিম দিকে আবার খানিকটা খোলা জমি। ডান দিকে গগনেন্দ্রনাথ, সমরেন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথদের মস্ত বাড়ী, তার দক্ষিণে একটি নাতিবৃহৎ উদ্যানে ফুলগাছের চারা ও বড় বড় গাছের ভিড়। ধূলিমলিন অলিগলির ইট-কাঠের শুষ্কতার মাঝখানে একখানি জীবত নিসর্গ চিত্র- তৃণহরিৎ ক্ষেত্র, ফুলগাছের কেয়ারি, শ্যামলতার মর্মর সঙ্গীত। দখিনা বাতাস বয়, কুড়ি-ফোটার খবর আসে, জেগে ওঠে গানের পাখীরা।

ঠাকুরবাড়ী আজও জোড়াসাঁকোয় দাঁড়িয়ে অতীতের স্বপ্ন দেখছে, কিন্তু সে বাগান আর নেই। মরু-মুল্লুকের মারোয়াড়ী এসে তার বেদরদী হাত দিয়ে লপ্ত করেছে সেই ধ্বনিময়, গন্ধময়, বর্ণময় স্বপ্ননীড়খানি। আর নেই সেই ফল-ঝরা ঘাসের বিছানা, সবুজের মর্মর-ভাষা, গীতকারী বিহঙ্গদের আত্মনিবেদন।

মাইকেলের রাবণ বলেছিল, “কুসমিত নাট্যশালাসম ছিল মম পুরী।” আগে ঠাকুরবাড়ীও ছিল তাই।কখনো পুরাতন বাড়ীর ভিতরে, কখনো রবীন্দ্রনাথের বিচিত্রাভবনে, কখনো অবনীন্দ্রনাথদের মহলে বসত অভিনয়ের বা গানের বা নাচের বা কাব্যপাঠের আসর। বাংলার শিক্ষিত সমাজে নৃত্যকলা যখন অভিনন্দিত হয়নি, ঠাকুর-