বন্ধ হয়ে গেল লেখাপড়া। ভগবানদত্ত দৃষ্টি হারালেন বটে, কিন্তু নিয়তি তাঁর ভগবানদত্ত সুকণ্ঠ কেড়ে নিতে পারলে না। কৃষ্ণচন্দ্র সঙ্গীতসাধনায় নিযুক্ত হয়ে রইলেন একান্তভাবে। ষোলো বৎসর বয়সে স্বর্গত সঙ্গীতবিদ শশিমোহন দে’র শিষ্যত্ব স্বীকার করলেন এবং তারপর সতীশচন্দ্র চক্রবর্তী, গয়ার মোহিনীপ্রসাদ, প্রফেসর বদন খাঁ ও করমতুল্লা খাঁ প্রভৃতির কাছে সাগরেদি ক’রে টপ্পা, ঠুংরী ও খেয়ালে নিপণতা অর্জন করেন। কীর্তনবিদের কাছে কীর্তন শিক্ষা করেছেন পরিণত বয়সেও। শুনেছি ওস্তাদ জমীরুদ্দীন খাঁও তাঁকে কোন কোন বিষয়ে সাহায্য করেছেন।
অন্ধ হয়ে বিদ্যালয় ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন বটে, কিন্তু তাঁর বাড়ীর লেখাপড়া বন্ধ হয়নি। একাধিক ভাষায় তিনি অর্জন করেছেন উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব। আলাপ ক’রে বুঝেছি, তাঁর মধ্যে আছে যথেষ্ট সাহিত্যবোধ ও কাব্যানুরাগ—অধিকাংশ ওস্তাদ গায়কের মধ্যে যার অভাব অনুভব করেছি।
প্রথমে পূর্বোক্ত নরেনবাবুর বাড়ীতে এবং পরে বিশ্ববিখ্যাত পালোয়ান শ্রীযতীন্দ্র গুহ বা গোবরবাবুর বাড়ীতে প্রায়ই বসত উচ্চশ্রেণীর গানবাজনার বৈঠক। গান গাইতেন স্বর্গীয় ওস্তাদ জমীরুদ্দীন গাঁ ও কৃষ্ণচন্দ্র। তাঁদের গান শেষ হ’লেও প্রায় মধ্যরাত্রে শরদ নিয়ে বসতেন অনন্যসাধারণ শিল্পী করমতুল্লা খাঁ সাহেব। তবলায় সঙ্গত করতেন স্বর্গীয় দর্শন সিং। সময়ে সময়ে আসর ভাঙ্গত শেষ রাতে। জমীরুদ্দীন ও কৃষ্ণচন্দ্রের গানের ভাণ্ডার ছিল অফুরন্ত।
আমাদের ওস্তাদ গায়কদের গানের গলা হয় অত্যন্ত শিক্ষিত এবং সঙ্গীতকলার কোন কলকৌশলই তাঁদের অজানা থাকে না। শাস্ত্রের সব বিধিনিষেধ মেনে তাঁরা গান গেয়ে যেতে পারেন যন্ত্রচালিতবৎ, কোথাও একটু-আধটু এদিক-ওদিক হ’তে দেখা যায় না। এ হিসাবে তাঁদের নিখুঁতে বলতে বাধে না। কৃষ্ণচন্দ্রও আগে গান গাইতেন ঐ ভাবেই।
কিন্তু ক্রমে ধীরে ধীরে বদলে আসে তাঁর গান গাইবার পদ্ধতি। আগেই বলেছি, কৃষ্ণচন্দ্রের মধ্যে আছে প্রভূত কাব্যরস, মানে না
১৬৮