পাতা:এখন যাঁদের দেখছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
এখন যাঁদের দেখছি

দেখা দেবার জন্যেও অনুরোধ করা হয়। কিন্তু তিনি বড়ই নারাজ, বললেন, “থিয়েটারে গান গাইলে গায়কসমাজে আমার জাত যাবে।” এদেশে যাঁরা বড় গায়ক হ’তে চেয়েছেন, তাঁরা বরাবরই চলতেন রঙ্গালয়কে এড়িয়ে। বাংলা রঙ্গালয়ে যাঁরা সঙ্গীতশিক্ষক ছিলেন–যেমন রামতারণ সান্ন্যাল, পূর্ণচন্দ্র ঘোষ, কাশীনাথ চট্টোপাধ্যায় ও দেবকণ্ঠ বাগচী প্রভৃতি—তাঁরা সঙ্গীতবিদ হ’লেও ওস্তাদ-সমাজের অন্তর্গত ছিলেন না। পাশ্চাত্য দেশে দেখা যায় অন্য রকম ব্যাপার। শালিয়াপিন ও ক্যারাসো প্রমুখ গায়করা ওস্তাদ ব’লে অক্ষয় যশ অর্জন করেছেন রঙ্গালয়ের গীতাভিনয়ে ভূমিকা গ্রহণ ক’রেই। ভাগনর প্রমুখ অমর সুরকাররা সুর সৃষ্টি করেছেন রঙ্গালয়ের গীতিনাট্যের জন্যেই।

 যা হোক শেষ পর্যন্ত কৃষ্ণচন্দ্রকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে রাজী করানো গেল। “বসন্তলীলা” পালায় তিনি রঙ্গমঞ্চের উপরে অবতীর্ণ হয়ে কয়েকখানি গান গেয়ে লাভ করলেন অপূর্ব অভিনন্দন। তার পরে দেখা দিলেন “সীতা” পালায় বৈতালিকের ভূমিকায়। আমার রচিত “অন্ধকারের অন্তরেতে অশ্রবাদল ঝরে” গানটি তাঁর স্বর্গীয় কণ্ঠের গুণে এমন উতরে গেল যে, তারপর থেকে ফিরতে লাগল পথে পথে লোকের মুখে মুখে। কৃষ্ণচন্দ্রেরও ভ্রম ভেঙে গেল। রঙ্গালয়ের সম্পর্কে এসে গায়কসমাজে তাঁর খ্যাতি একটুও ক্ষুন্ন হ’ল না, ওদিকে জনসমাজে হয়ে উঠলেন তিনি অধিকতর লোকপ্রিয়।

 তাঁকেও পেয়ে বসল থিয়েটারের নেশা। শিশির-সম্প্রদায় থেকে মিনার্ভা থিয়েটারে, তারপর রঙমহলে তিনি কেবল গানের সুর সংযোজনা নিয়েই নিযুক্ত হয়ে রইলেন না, রঙ্গমঞ্চের উপরেও দেখা দিতে লাগলেন ভূমিকার পর ভূমিকায় এবং প্রমাণিত করলেন, দৃষ্টিহারা হয়েও তিনি করতে পারেন উল্লেখযোগ্য অভিনয়। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত তিনি কোন না কোন দিক দিয়ে নাট্যজগতের সঙ্গে নিজের সম্পর্ক বজায় না রেখে পারেননি। সাধারণ রঙ্গালয় ছেড়েছেন বটে, কিন্তু বাস করছেন চলচ্চিত্রের জগতে। সেখানেও সুর দিয়েছেন, গান শুনিয়েছেন, অভিনয় দেখিয়েছেন,

১৭০