করলে লেখকদের রচনাশক্তি প্রবুদ্ধ হয়ে উঠত অধিকতর। নরেনের বেলাতেও তার ব্যতিক্রম হ’ল না। বেড়ে উঠল তাঁর লেখনীর প্রজননশক্তি। তিনি লিখতে লাগলেন রাশি রাশি কবিতা। অন্য শ্রেণীর রচনাতেও করলেন হস্তক্ষেপ।
মাঝে মাঝে আমরা দল বেঁধে কলকাতার বাইরে বেরিয়ে পড়তুম। সাধারণতঃ প্রেমাঙ্কুর আতর্থী, চিত্রশিল্পী চারুচন্দ্র রায়, “মৌচাক” সম্পাদকসুধীরচন্দ্র সরকার, নরেন্দ্র দেব ও আমাকে নিয়েই দল গড়া হ’ত। একবার আমরা কটক ও ভুবনেশ্বর হয়ে পুরীতে গিয়েছি, সেখান থেকে যাব কণারকে। কিন্তু নরেনের জন্যে সে যাত্রা আমাদের আর কণারকে যাওয়াই হ’ল না।
পুরীতে সবাই মিলে সাগরে নেমেছি স্নান করব ব’লে। আমি মন্দ সাঁতার জানি না, এক সময়ে গঙ্গায় এপার-ওপার করেছি। কিন্তু পুরীর অশান্ত সমুদ্রকে ভয় করতুম, সেখানে সাঁতার দেবার ভরসা হ’ত না। প্রেমাঙ্কুর জানেন নামমাত্র সাঁতার, হাঁটু জলের বেশী আর অগ্রসর হ’লেন না। সাঁতারু হিসাবে নরেনেরও কোন উল্লেখযোগ্য কৃতিত্বের কথা শুনিনি, অথচ দেখলুম তিনি বেশ সোঁ সোঁ করে সমুদ্রের ভিতরে এগিয়ে যাচ্ছেন। আমরা চীৎকার ক’রে তাঁকে সাঁতারে নিরস্ত হ’তে বললুম, কিন্তু তিনি জলের উপরে হাত ছুঁড়তে ছুঁড়তে আরো বেশী দূর এগিয়ে যেতে লাগলেন। আমরা তখন পর্যন্ত বুঝতে পারিনি যে, নরেন মোটেই সাঁতার দিচ্ছিলেন না, তাঁকে জোর ক’রে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল সমুদ্রের “আণ্ডার কারেণ্ট” বা অন্তঃস্রোত। তারপর আমাদের স্তম্ভিত দৃষ্টির সামনেই নরেনের দেহটা তলিয়ে গেল সমুদ্রের ভয়াবহ “ব্রেকার” বা তটে প্রতিহত ভগ্নোর্মিমালার মধ্যে।
চারিদিকে হৈ হৈ রব। তাবৎ স্নানার্থী সভয়ে তাড়াতাড়ি ডাঙায় উঠে পড়ল। প্রেমাঙ্কুর বালকের মত কাঁদতে লাগলেন। আমরা আচ্ছন্নের মত দাঁড়িয়ে রইলুম—চোখের সামনে সব অন্ধকার।
কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে যাঁকে রাধারাণী দেবীর কেশবীথির প্রান্তে এঁকে দিতে হবে সিন্দূরের রক্তরাগ, এমনভাবে তাঁকে অকালে
১৭৫