পাতা:এখন যাঁদের দেখছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ী

বাড়ীতে এসে তখনও নাচ দেখিয়ে গিয়েছেন জাপানের সেরা নর্তকী তেস্কোয়া এবং স্বর্গীয় শিল্পী যতীন্দ্রনাথ বসন। “ফাল্গুনী" নাট্যাভিনয়েও আমাদের সামনে এসে নৃত্যচঞ্চল মূর্তিতে আবির্ভূত হয়েছেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ, অন্ধ বাউলের ভূমিকায়।

কলকাতায় গানের মালা গেঁথে রবীন্দ্রনাথ ঋতু-উৎসবও সুরু করেন জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ীতেই। বিচিত্রা-ভবনের পশ্চিমদিকে খোলা জমির উপরে বৃহৎ পটমণ্ডপ বেঁধে আসরে বহু, শ্রোতার জন্যে স্থান সংকুলান করা হয়েছিল। বহ, গায়ক, গায়িকা ও যন্ত্রী সেই উৎসবে যোগদান করেছিলেন। সেটা বর্ষা কি বসন্ত ঋতুর পালা, তা আর স্মরণ হচ্ছে না, তবে জলসা যে রীতিমত জমে উঠেছিল, একথা বেশ মনে আছে। ঋতুর জন্যে এমন দল বেধে ঘটা করে পার্বণের আয়োজন, এদেশে এটা ছিল তখন অভিনব ব্যাপার। কেবল দোলযাত্রায় এখানে রং ছাড়ে হৈ হৈ ক'রে হোলীর গান গেয়ে মাতা- মাতি হড়োহুড়ি করা হয় বটে। কিন্তু সে হচ্ছে নিতান্ত প্রাকৃত- জনদের উৎসব, ললিতকলাপ্রিয় শিক্ষিতদের প্রাণ তাতে সাড়া দেয় না।

নাচ-গান-অভিনয় বা কাব্যপাঠের আসর না বসলেও বিভিন্ন অনষ্ঠানের অভাব হ'ত না। তখন বসত গল্প ও সংলাপের বৈঠক এবং সেখানে এসে সমবেত হতেন বাংলাদেশের বিদ্বজ্জনসমাজের বাছা-বাছা বিখ্যাত ব্যক্তিগণ, তাঁদের নামের দীর্ঘ ফর্দ এখানে দাখিল করা অসম্ভব। এমনি সব বৈঠকের আয়োজন করা ঠাকুর- বাড়ীর চিরদিনের বিশেষত্ব। আমরা যখন ভূমিষ্ঠ হইনি, তখনও ঠাকুরবাড়ীর বৈঠকের শোভাবর্ধন ক'রে যেতেন দেশের যত পণ্য- শ্লোক ব্যক্তিগণ। ঈশ্বর গপ্ত থেকে সর, ক'রে প্রায় প্রত্যেক জ্ঞানী ও গণী বাঙালী এখানে এসে ওঠা-বসা ক'রে গিয়েছেন। ঠাকুরদের এই প্রাচীন বাসভবনকে যে Historic বা ইতিহাস প্রসিদ্ধ বাড়ী ব'লে গণ্য করা যায় সে বিষয়ে কোনই সন্দেহ নেই। সারা কলকাতা সহরে এর চেয়ে গরিমাময় বাড়ী নেই আর একখানিও।

তখনকার সেই আনন্দ-সম্মিলনের দিনে প্রায়ই আমরা অবনীন্দ্র- নাথের কাছে গিয়ে উপস্থিত হতুম। কখনো তাঁকে পেতুম দোতালার