লাভ করতে হবে সলিলসমাধি, নিশ্চয়ই তা ছিল না নিয়তির বিধানে।
“ব্রেকারে”র ওপারে সমুদ্রের জল অত্যন্ত শান্ত ও স্বচ্ছ, তলাকার বালুকাশয্যা পর্যন্ত স্পষ্ট ক’রে দেখা যায়। দৈবগতিকে এবং নরেনের সৌভাগ্যক্রমেই সেখানে সন্তরণে নিযুক্ত ছিল কয়েকজন স্থানীয় বালক। তারাই নরেনের চৈতন্যহীন দেহকে আবার ডাঙায় তুলে আনলে।
হ’তে বসেছিল বিয়োগান্ত দৃশ্যের অবতারণা, নরেন নিজেই তাকে পরিণত করলেন প্রহসনে।
বেলাবালুকার উপরে নিষ্পন্দ হয়ে পড়ে আছে নরেনের অচেতন দেহ। তাঁর দুই চক্ষু মুদ্রিত, মুখ হাঁ করা। তাঁর চারিধার ঘিরে বৃহৎ জনতা। ক্রমে বোঝা গেল, ধীরে ধীরে তাঁর সংবিৎ ফিরে আসছে। একদল মাড়োয়ারী স্ত্রীলোক সেখানে দাঁড়িয়ে তাঁর জন্যে হায় হায় করছিল। হঠাৎ নরেন মিটমিট ক’রে তাদের পানে তাকিয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন, “রাম নাম সত্য হায়, রাম নাম সত্য হায়।”
মাড়োয়ারী স্ত্রীলোকরা ক্ষাপ্পা। ভাবলে, বাঙালী বাবুটা লোক ঠকাবার জন্যেই এতক্ষণ ঢং ক’রে পড়েছিল। তারা গালাগালি দিতে দিতে চ’লে গেল।
স্বর্গীয় কবি গিরিজাকুমার ও তাঁর ভার্যা লেখিকা শ্রীমতী তমাললতা বসু তখন কার্মাটারে বাস করছিলেন। তাঁদের আমন্ত্রণে একবার আমরাও সবাই কার্মাটারে গিয়ে হাজির হলুম। সেইখানেই একদিন তরুণী রাধারাণী আমাদের সঙ্গে আলাপ করতে এলেন; তখন তাঁর উপাধি ছিল, ‘দত্ত’। তখনই তিনি কাব্যসাধনা সুরু ক’রে দিয়েছেন সাময়িক পত্র-পত্রিকায়। তবে সে সময়েই নরেনের সঙ্গে তাঁর চোখের দেখা উভয়ের মনের মিলনের ভিত্তি রচনা করেছিল কি-না বলতে পারি না, কারণ নরেন সে কথা আমাদের কাছে প্রকাশ করেননি ঘুণাক্ষরেও। প্রথম দিনেই রাধারাণী দেবীর সঙ্গে আলাপ ক’রে আমার মনে হয়েছিল তাঁর মুখে চোখে ও ভাষায় আছে মনীষার প্রভাব। পরে তাঁর ঘনিষ্ঠ সংস্রবে আসবার সুযোগ পেয়ে অধিকতর বদ্ধমূল হয়েছে আমার সেই ধারণা।
১৭৬