সেইবারেই আমাদের একটি বৃহৎ দল কার্মাটার থেকে ঝাঁঝায় গিয়েছিল বনভোজনের আনন্দ উপভোগ করতে। সেখানেও নরেনের প্রাণহানি না হোক, অঙ্গহানি হবার সম্ভাবনা উপস্থিত হয়েছিল। সে গল্পটাই বা বাকি থাকে কেন।
সবুজ-মাখানো, পাখী-ডাকানো, ছায়া-দোলানো নিরালা বনভূমি, তারই ভিতরে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে শৈলের পর শৈল এবং তারই ভিতরে জলবীণা বাজাতে বাজাতে ও সূর্যকরে হীরার হার গাঁথতে গাঁথতে উচ্ছ্বল আমোদে বয়ে চলেছে নৃত্যশীলা তটিনী। বনভোজনের পক্ষে আদর্শ জায়গা। আমাদের সম্মিলিত কণ্ঠের আনন্দ-কলরবে মুখরিত হয়ে উঠল সেখানকার বিজনতা।
কিন্তু আচম্বিতে কয়েক মিনিটের মধ্যেই হ’ল অভাবিত দৃশ্যপরিবর্তন। অঝোরে নামল অকালবর্ষা এবং রবীন্দ্রনাথের ভাষায়—বনে বনে থেকে থেকে ঝড় দোলা দিতে লাগল হেঁকে হেঁকে। দেখতে দেখতে পাহাড়ের গা বয়ে হুড় হুড় ক’রে জল নেমে আসায় ক্ষীণা গিরিনদী হয়ে উঠল একেবারেই দুস্তর। আমাদের সঙ্গে ছিলেন কয়েকজন মহিলা, তাঁদের নিয়েই সকলে অধিকতর বিব্রত হয়ে পড়লেন। সকলেরই অবস্থা হয়ে উঠল ভিজে বিড়ালের মত।
তারপর যেমন সহসা এসেছিল, তেমনি সহসাই অদৃশ্য হয়ে গেল সেই বনবাসী ঝড়বৃষ্টি। আবার রোদ উঠল। তমাললতা দেবী একটা গাছতলায় খিচুড়ির হাঁড়ি চড়িয়ে দিলেন।
সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নরেন খবরদারি করছেন, হঠাৎ সচমকে দেখি তাঁর পিছন দিকে কোমরের উপরে একটা বৃশ্চিক! তেমন ভয়াবহ, সুবৃহৎ ও হৃষ্টপুষ্ট পাহাড়ে-বিছে জীবনে আমি আর কখনো দেখিনি, কামড়ালে আর রক্ষা নেই!
চেঁচিয়ে উঠলাম, “নরেন, তোমার পিঠে একটা মস্ত বিছে!”
ব্যাস, আর কিছু বলতে হ’ল না, ঝাঁকুনি দিয়ে বিপদকে গা থেকে ঝেড়ে ফেলবার জন্যে নরেন চোখ কপালে তুলে এবং দুই বাহু ঊর্ধ্বে উৎক্ষিপ্ত ক’রে এমন আশ্চর্য নর্তন–কুর্দন সুরু ক’রে দিলেন যে, কোথায় লাগে তার কাছে উদয়শঙ্করের তাণ্ডবনৃত্য!
আমার হাতে ছিল একগাছা বৃহৎ লগুড় —যাকে বলে দস্তুরমত
১৭৭