গান গেয়েছেন ও সুরসৃষ্টি করেছেন। দিলীপকুমারও ঔপন্যাসিক, কবি, প্রবন্ধকার, সুরকার ও গায়ক। নাটকও রচনা করেছেন একাধিক। এদেশে বহু পরিবারেই বংশানুক্রমে সঙ্গীতের অনুশীলন চলে। এ-সব পরিবারের শিল্পীদের বলা হয় “ঘরানা গায়ক”। দিলীপকুমারও তাই। কেবল তিনি ও তাঁর পিতা নন্, তাঁর পিতামহ কার্তিকেয়চন্দ্র রায়ও ছিলেন খ্যাতিমান সঙ্গীতবিদ্।
তাঁর উপন্যাস পেয়েছে শরৎচন্দ্রের কাছ থেকে প্রশংসা। তাঁর কবিতাও লাভ করেছে রবীন্দ্রনাথের প্রশস্তি। কিন্তু আমি হচ্ছি ক্ষুদ্র ব্যক্তি, ওঁদের কাছে আমার মতামত তুচ্ছ। তবু এইটুকুই খালি বলতে পারি, দিলীপকুমারকে আমিও সুলেখক ব’লে গণ্য করি বটে, কিন্তু আমি সবচেয়ে বেশী আকৃষ্ট হই তাঁর গানের দিকেই। তাঁর আসল কৃতিত্ব সঙ্গীতক্ষেত্রেই। বড়ই দঃখের বিষয় যে, কাব্য ও চিত্র প্রভৃতিকে যেমন ধ’রে রাখা যায়, গান, নাচ ও অভিনয়-কলাকে তেমন চিরস্থায়ী করা যায় না। গায়কের, নর্তকের ও অভিনেতার জীবনদীপ নেবার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদের ব্যক্তিগত আর্ট চ’লে যায় মানুষের দেখাশোনার বাইরে। তবু লোক পরম্পরায় মুখে মুখে ফেরে তাঁদের নাম। তানসেন আজও মরেন নি। গ্যারিক আজও অমর। পাবলোভা আজও বেঁচে আছেন। দিলীপকুমারকেও বাঁচতে হবে ঐ সঙ্গীতস্মৃতির জগতেই।
বাংলা গানে তিনি এনেছেন একটি অভিনব ঢঙ বা ভঙ্গি, যা সম্পূর্ণরূপেই তাঁর নিজস্ব। যেমন রবীন্দ্রনাথ ও দ্বিজেন্দ্রলালের রচনাপদ্ধতি, অবনীন্দ্রনাথের চিত্রাঙ্কনপদ্ধতি, শিশিরকুমারের অভিনয়পদ্ধতি ও উদয়শঙ্করের নৃত্যপদ্ধতি সম্যকভাবেই তাঁদের ব্যক্তিগত, অগণ্য পদ্ধতির মধ্যেও তারা স্বয়ংপ্রধান হয়ে বিরাজ করে, দিলীপকুমারের গান গাইবার পদ্ধতিও সেই রকম অপূর্ব। ওস্তাদী “ব্যাকরণে”র দ্বারা কণ্টকিত ও উৎপীড়িত না ক’রেও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের দ্বারা যে সর্বশ্রেণীর শ্রোতার শ্রবণেই মধুবর্ষণ করা যায়, দিলীপকুমারের আসরে আসীন হ’লেই পাওয়া যায় সে প্রমাণ। কি উন্মাদনা আছে তাঁর গানে, কি রসের ব্যঞ্জনা আছে তাঁর সূরে, আর কি কলকণ্ঠের অধিকারী ও দরদী গায়ক তিনি! চিত্তও তাঁর
১৮৩