পাতা:এখন যাঁদের দেখছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দিলীপকুমার রায়

“প্রিয়বরেষু

 আপনার পত্র পেয়ে খুব হাসলাম। আপনার কবিতা ("ছন্দা”র) বেশ লেগেছিল। আপনার গানগুলি পেয়ে সুখী হলাম। দেখব কি করা যায়। সুর মাথায় না এলে মুস্কিল। কিন্তু আপনার আরো কয়েকটা গান পাঠাবেন। প্রেমের গানও একটা পাঠাবেন কিন্তু— আমি প্রেমের গান যে একেবারেই গাই না বললে সত্যের অপলাপ করা হয়। সেদিন Chopin-এর একটি জর্মন গানের অনুবাদ করেছি, আপনাকে পাঠাচ্ছি—ঐ ছন্দে মিলে সুরে। যদি ভালো লাগে “ছন্দা”য় ছাপাবেন। কিন্তু ভালো না লাগলে দোহাই ধর্ম, ছাপাবেন না—আমি কিছু মনে করব না।

 দেখুন প্রিয়বর, একটা কথা ব’লে রাখি অত্যন্ত সরল বিনয়ে। কাব্যজগতেও আমি সাধ্যমত সত্যপন্থী হ’তে চেষ্টা করি। কিন্তু ফলে অনেক বন্ধু হারিয়েছি—কারুর কারুর কাব্যকে ভালো বলতে না পারার দরুণ। আপনার বন্ধুত্ব আমার কাছে সত্যই কাম্য বলেই ভয় হয়, পাছে আপনার সব গানকে ভালো বলতে না পারলে আপনিও আমাকে বিসর্জন দেন। আপনার একজন প্রিয় কবির কবিতা আমার ভালো লাগে না। তিনি আমাকে বহু উপরোধ করেছেন তাঁর কাব্য সমালোচনা করতে- আমি করতে পারিনি—যদিও তাঁর কাজের কোথাও নিন্দা করিনি-কিন্তু তিনি চ’টে গেলেন মোক্ষম। ... আমার গান কবিতা কিছুও যদি আপনার ভালো না লাগে তবু আপনার প্রীতিকে আমি সমানই চাইব, কেননা আমি সার বুঝি ভালোবাসার অহেতুক স্নেহকে। আপনি আমাকে স্নেহ করেন এইটুকুই আমি চাই- আর কিছু, না।...... প্রগলভতা মার্জনা করবেনঃ তবে আপনি প্রবীণ লোক, অনেক দেখেছেন শুনেছেন, কাজেই মনে হয় বুঝবেন আমার সঙ্কোচ ও আক্ষেপ। পূজোর সংখ্যা “ছন্দা” একখানা আমাকে পাঠাবেন? যেখানা পাঠিয়েছিলেন সেটি রবীন্দ্রনাথ পড়েছেন, তাঁর কাছেই আছে” প্রভৃতি।

 কিন্তু আমার ভাগ্যে সে দিলীপকুমার আজ একেবারেই বদলে গেছেন। পত্রালাপ বন্ধ করে দিয়েছেন। কলকাতায় এলেও খবর নেন না বা গানের আসরে আমন্ত্রণ করেন না। কারণ ঠিক জানি

১৮৫