লেখনী নূতন নাটক প্রসব করলেই গান লিখতে ও নাচ দিতে হবে আমাকেই।
তোড়জোড় দেখেই অনুমান করতে পেরেছিলুম, “গৈরিক পতাকা” মন্দ চলবে না। তবে খুব একটা বড় কিছুর আশা করি নি। কিন্তু পালাটি খোলার সঙ্গে সঙ্গেই যে বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করলে, সেটা আমরা কেহই কল্পনাতেও আনতে পারি নি। ঐ বাড়ীতেই “সীতা” খোলা হয় এবং তার অসামান্য লোকপ্রিয়তার কথা কারুর কাছেই অবিদিত নেই। কিন্তু “গৈরিক পতাকা” দেখবার জন্যে প্রথম কয়েক রাত্রে প্রেক্ষাগৃহে যে মহতী জনতা সমাগত হয়েছিল, তার নিবিড়তা ছিল “সীতা”র চেয়েও বেশী। বিডন ষ্ট্রীট দিয়ে খানিকক্ষণের জন্যে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যেত এবং ভিড় সামলাবার জন্যে পুলিসবাহিনী মোতায়েন রাখতে হ’ত। জনতাকে নিয়মিত করবার জন্যে রঙ্গালয়ের অঙ্গনেও বাঁশের বেড়া বাঁধতে হয়েছিল।
“গৈরিক পতাকা” শচীন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠ রচনা নয়। তিনি তার চেয়ে ভালো একাধিক নাটক রচনা করেছেন। তার গঠন ও আবেদনও অল্পবিস্তর মামুলী। হয়তো সেইটেই তার কাজে লেগে গিয়েছে। আগেই ইঙ্গিতে বলেছি, এদেশী দর্শকদের মন আজও অতিআধুনিক বাস্তব নাটকের জন্যে প্রস্তুত হয়ে ওঠে নি। নবযুগেও এখানে যে সব নাটক (কর্ণার্জুন, সীতা, আত্মদর্শন, দিগ্বিজয়ী ও গৈরিক পতাকা) সবচেয়ে লোকপ্রিয় হয়েছে, তার কোনখানিরই রচনাপদ্ধতি আধুনিক নয়। “কিন্নরী”র মত নিম্নশ্রেণীর নাটকেরও পুনরভিনয় দেখবার জন্যে আজও বাংলা রঙ্গালয়ে ভিড় ভেঙে পড়ে।
প্রায় পঁচিশ বৎসর আগে খোলা হয়েছিল “গৈরিক পতাকা”, কিন্তু আজও লোকে তাকে দেখতে চায়। অভিনয়ের দিক দিয়ে, নাচ-গানের দিক দিয়ে এবং সাজপোশাক ও দৃশ্যপটাদির দিক দিয়ে “গৈরিক পতাকা” তার পূর্বগৌরব হারিয়ে ফেলেছে, তবু এখনো বিভিন্ন রঙ্গালয়ে তাকে নিয়ে কাড়াকাড়ি চলে।
নাট্য-সমালোচকরা যখন তখন দাবি করেন—নূতন যুগের জন্যে চাই নূতন আদর্শের নাটক। কিন্তু তাঁদের সে দাবি মিটবে কেমন
১৯২