পাতা:এখন যাঁদের দেখছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/২০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত

ক’রে? দাবিদারদের কথামত কাজ করতে গেলে রঙ্গালয়ের পর রঙ্গালয়ে নিবে যাবে সাঁঝের বাতি—যেমন নিবে গিয়েছিল “নাট্যমন্দিরে”, রবীন্দ্রনাথের “তপতী” খুলে।

 শচীন্দ্রনাথ নূতন যুগের উপযোগী নূতন আদর্শের নাটক রচনা করেছেন। দৃষ্টান্তস্বরূপ “ঝড়ের রাতে”র নাম করতে পারি। পরিকল্পনা, সংলাপের ভাষা, ভাববৈচিত্র্য, চরিত্রচিত্রণ ও আখ্যানবস্তু প্রভৃতি সব দিকেই নাট্যকারের বিশেষ মুনশীয়ানার পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গীও সম্পূর্ণ আধুনিক। শ্রীসতু সেন দৃশ্য পরিকল্পনাতেও প্রভূত আধুনিকতা প্রকাশ করেছিলেন এবং স্বর্গীয় রাধিকানন্দ মুখোপাধ্যায়, নির্মলেন্দু লাহিড়ী ও নীহারবালা প্রভৃতির অভিনয়ও হয়েছিল অনবদ্য। তবু নাটকখানি বেশীদিন চলেনি। তাঁর “জননী” সম্বন্ধেও ঐ কথা। আরো দুই-তিনখানি নাটকেও শক্তির পরিচয় দিয়েও দর্শকদের হৃদয় হরণ করতে না পেরে, অবশেষে তিনি পুরাতন পদ্ধতিতেই রচনা করলেন “সিরাজদৌলা” এবং সঙ্গে সঙ্গে সার্থক হ’ল তাঁর পরিশ্রম। নাবালক সিরাজের ভূমিকায় বৃদ্ধ নির্মলেন্দু, তাও লোকের চোখে বিসদৃশ ঠেকল না, রাত্রির পর রাত্রি প্রেক্ষাগৃহ পরিপূর্ণ হয়ে উঠতে লাগল বিপুল জনতায়। “গৈরিক পতাকা”র মত “সিরাজদৌলা”রও পুনরভিনয়ের আয়োজন হয় বিভিন্ন রঙ্গালয়ে। শচীন্দ্রনাথের সমগ্র নাটকাবলীর মধ্যে এই দুটি পালাই যেন প্রধান হয়ে উঠেছে। কিন্তু তাঁর যে সব নাটক উচ্চতর শ্রেণীর, তা প্রায় অবজ্ঞাত বা উপেক্ষিত হয়ে আছে। বাঙালী নাট্যকারদের কপাল এমনি পাথরচাপা।

 শচীন্দ্রনাথ কেবল বাংলা নাটকে আধুনিকতা ও নব যুগধর্মের পুরোধা নন, বর্তমান কালের প্রধান নাট্যকার ব’লে পরিচিত করতে গেলে তাঁর ছাড়া আর কারুর নাম মনে ওঠে না।

১৯৩