খ্যাতি ছিল না। সঙ্গীত বিভাগের ভার গ্রহণ করেছিলেন সমাজবহির্ভূত সমাজেরই কন্যাগণ। বাড়ীতে বসেও উচ্চ শ্রেণীর গান শুনতে হ’লে ধনীরা করতেন বাইজীদের আমন্ত্রণ। মধ্যবিত্ত ব্যক্তিগণ অতটা উচ্চে উঠতে পারতেন না, বাড়ীর কোন ক্রিয়াকর্মের সময়ে তাঁরা বায়না দিতেন খেমটাওয়ালীদের। আজকাল ভদ্র পরিবারে নাচগানের রেওয়াজ খুব বেড়েছে ব’লে বাইজী এবং খেমটাওয়ালীদের পসার একরকম নেই বললেও চলে। কিন্তু আমাদের বাল্যকালেও তাদের প্রভাব ছিল রীতিমত বাড়ন্ত।
চল্লিশ বৎসর আগেও ভদ্রমহিলাদের মধ্যে ছিল না গায়িকা ব’লে সুপ্রতিষ্ঠ হবার চেষ্টা। উপরন্তু এমন চেষ্টা সমাজপতিদের সমর্থনও লাভ করত না। ধনীদের অন্তঃপুরে কিছু কিছু সৌখীন গানবাজনার চর্চা যে ছিল না, এ কথা বলতে পারি না। কিন্তু ঐ পর্যন্ত। সে খবর জনসাধারণের কাছে গিয়ে পৌঁছত না। চল্লিশ—পঞ্চাশ বৎসর আগেকার কোন প্রখ্যাত মহিলা গায়িকার নাম কেউ জানে না। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের ভগ্নী স্বর্গীয়া অমলা দাশ প্রথম যখন গ্রামোফোনে গান দেন, তখন সেই অভাবিত ব্যাপারে চারিদিকে জেগেছিল বিস্ময়ের সাড়া। তারও অনেক পরে যখন কলকাতায় বেতারে গানের আসর বসে, তখনও গোড়ার দিকে মহিলারা গান গাইবার জন্যে আগ্রহ প্রকাশ করেননি। সবাক চলচ্চিত্র সম্বন্ধেও ঐ কথাই বলা যায়।
সে যুগে গানের আসর রেখেছিলেন শ্রেণীবিশেষের নারীরাই। গহরজান ও মালকাজান প্রভৃতির কথা এখানে ধর্তব্য নয়, কারণ তাঁরা বাঙালী ছিলেন না। কিন্তু বাঙালী গায়িকাদেরও মধ্যে অনেকে কিনেছিলেন দেশজোড়া নাম। যেমন শ্রীজান, যাদুমণি ও বিনোদিনী প্রভৃতি। যাদুমণির গান আমি শুনেছি, তাঁর গলা ও গাইবার রীতি ছিল চমৎকার। গ্রামোফোনের পুরাতন রেকর্ডে বিনোদিনীর গান এখনো শোনবার সুযোগ আছে। একালের অধিকাংশ মহিলা গায়িকার মত তাঁর গলায় নাকী সুরের উৎপাত ছিল না। তিনি ছিলেন প্রথম শ্রেণীর গায়িকা। ভরাট, মিষ্ট গলা,— নীচু থেকে উঁচু পর্দায় সমান করতবের কায়দা দেখাতে পারতেন।
১৯৬