তাঁর মত গায়িকা আজও দুর্লভ। তাঁর মৃত্যুর পরে রেকর্ডের গানে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন স্বর্গীয়া কৃষ্ণভাবিনী। তাঁর আসরের গানও আমি শুনেছি। বড় দরদ ছিল তাঁর গলায়।
কোহিনূর থিয়েটার তখন চলছে কি উঠে গেছে ঠিক স্মরণ হচ্ছে না, কিন্তু ঐ রঙ্গমঞ্চেই একটি জলসায় দুইজন বাঙালী গায়িকার গান আমার খুব ভালো লেগেছিল। তাঁরা হচ্ছেন হীরাবাঈ ও ইন্দুবালা, দু’জনেরই ছিল বয়স কাঁচা, কিন্তু গলা পাকা।
হীরাবাঈও আজ খুব নাম করতে পারতেন, কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার জন্যে দীর্ঘকাল ধ’রে তাঁকে গানের আসরের বাইরে থাকতে হয়েছিল। তবে তাঁর গাইবার শক্তি যে অটুট ছিল, ষোলো–সতেরো বৎসর আগে হিন্দুস্থান রেকর্ডে আমার রচিত একটি গান গেয়ে তিনি তা প্রমাণিত করেছিলেন।
আগে এদেশে বড় বড় গায়ক-গায়িকার অভাব ছিল না বটে, কিন্তু তাঁদের মুখে যে-সব বাংলা গান শুনতুম, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রচনা হিসাবে সেগুলি ছিল নিতান্ত অকিঞ্চিৎকর। তার প্রমাণ পাওয়া যাবে লালচাঁদ বড়াল, গহরজান, বিনোদিনী ও কৃষ্ণভাবিনী প্রভৃতির বাংলা গানের রেকর্ডগুলি শুনলেই। কিন্তু সেই সব কুলিখিত গানের বাজে কথাগুলি নিয়েই তখনকার শিল্পীরা সৃষ্টি করতেন সুরের সুরধুনী। সেদিন কোহিনূর রঙ্গমঞ্চে ইন্দুবালাও ঐ শ্রেণীর বাংলা গানই গেয়েছিলেন বটে, কিন্তু তাঁর কণ্ঠে পেয়েছিলুম আমি সুরের ইন্দ্রজাল। সুস্পষ্ট উচ্চারণ, জোরালো গলা, মেয়েলি ঢং বা নাকী সুর নেই। সুরচিত, কবিত্বপূর্ণ গান পেলে তিনি যে উচ্চতর শ্রেণীর সৌন্দর্য সৃষ্টি করতে পারবেন, এমন ধারণা আমার হয়েছিল।
আমার সে ধারণা যে ভ্রান্ত নয়, সেটা প্রমাণিত হ’ল আরো কয়েক বৎসর পরে। বোধ করি ছত্রিশ কি সাঁইত্রিশ বৎসর আগেকার কথা। রেকর্ডে ইন্দুবালার গলায় কবি শ্রীকুমুদরঞ্জন মল্লিক রচিত একটি গান (“ওরে মাঝী, তরী হেথা”) শূনে একেবারে অভিভূত হয়ে গেলুম। কাব্যের সৌন্দর্য ও সুরের ঐশ্বর্য এমন নিপুণভাবে যিনি এক সঙ্গে পরিবেশন করতে পারেন, শিল্পী হিসাবে নিশ্চয়ই তিনি
১৯৭