অনন্যসাধারণ। বুঝলুম কোহিনূর রঙ্গমঞ্চের জলসায় যে উদীয়মানা গায়িকাকে প্রথম দেখেছিলুম, আজ তিনি পূর্ণ গৌরবে সমুদিত হয়েছেন। “উজ্জল ভবিষ্যৎ” যে তাঁর করতলগত হয়েছে, সে সম্বন্ধে আমার মনে আর কিছুমাত্র সন্দেহ রইল না। সেই একটিমাত্র গানের জন্যেই তাঁর লোকপ্রিয়তা উঠল চরমে।
তারপর তাঁর কণ্ঠে শুনেছি কত রকমের গীত—হিন্দী বা উর্দু গান, নজরুল ইসলামের গজল, রামপ্রসাদী গান ও থিয়েটারি গান প্রভৃতি, কিন্তু সর্বশ্রেণীর সঙ্গীতেই স্বকীয় রস ও ভঙ্গির পরিচয় দিয়েছে তাঁর অমৃতায়মান কণ্ঠ।
আজকাল ঘরে ঘরে শোনা যায় রেডিয়োর গান। আমার তো প্রায়ই বেতারের গান শুনলে গায়ে আসে জ্বর। বেতারে মেয়েরাই কেবল নাকী সুর ধরেন না, অধিকাংশ পুরুষই যে-গলায় গান শোনান, তা কতকটা কান্নারই সামিল। কিন্তু ইন্দুবালার মেয়ে-গলায় আছে পুরুষোলি ভাব এবং ব্যক্তিগতভাবেই তাঁর পরিচয় পেয়ে বুঝেছি, ইন্দুবালার মধ্যে আছে অল্পবিস্তর “Tom-boy” এর বিশেষত্ব। হয়তো এই জন্যেই সৌখীন ও পেশাদার নাট্য-সম্প্রদায়ে তিনি বিভিন্ন পুরুষ ভূমিকায় প্রচুর দক্ষতা প্রকাশ করতে পেরেছেন। “বিষবৃক্ষ” পালায় দেবেন দত্তের ভূমিকায় গান গেয়ে ও অভিনয় ক’রে তিনি যথেষ্ট নাম কিনেছেন। মনোমোহন থিয়েটারে (“জাহাঙ্গীর” নাটকে) একটি পুরুষ ভূমিকায় তাঁকে যে-রকম লাফ-ঝাঁপ মারতে দেখেছিলুম, আর কোন মেয়ের পক্ষে তা সম্ভবপর ব’লে মনে হয় না।
তার আগেই ঐখানে অভিনীত হয়েছিল শ্রীশচীন্দ্রনাথ সেন গুপ্তের “রক্তকমল” নাটক। তার মধ্যে ছিল নজরুল ইসলাম রচিত গীতাবলী। অভিনয়ের মাঝে মাঝে এক একটি খণ্ড দৃশ্যে কয়েকটি গান গাইবার ভার পেয়েছিলেন ইন্দুবালা। গত তিন যুগের মধ্যে বাংলা রঙ্গালয়ে তেমন উচ্চশ্রেণীর গান আমি শুনিনি। শচীন্দ্রনাথের সুলিখিত নাটকের অভিনয়ও হয়েছিল উল্লেখযোগ্য। তবু সমগ্র নাট্যাভিনয়ের মধ্যে সবচেয়ে প্রাধান্য লাভ করেছিল মূল নাটক থেকে বিচ্ছিন্ন ভূমিকায় ইন্দুবালার সেই গানগুলিই।
লোকে বলে, ঈশ্বরদত্ত কণ্ঠস্বর না থাকলে কেউ হ’তে পারে না
১৯৮