শ্রেষ্ঠ সঙ্গীতবিশারদ। সুকণ্ঠ ভগবানদত্ত বটে, কিন্তু সেই কণ্ঠকে শিক্ষিত ও মার্জিত করবার জন্যে দরকার হয় কঠোর সঙ্গীত সাধনা। স্বর্গীয় দুষ্পাঠ্যমত বিস্ময়জনক গায়ক ভারতীয় সঙ্গীতজগতে আর কখনো জন্মগ্রহণ করেন নি। সঙ্গীতে তাঁর ছিল অশিক্ষিতপটুত্ব। তিনি নিয়মিতভাবে কণ্ঠসাধনা করেন নি, রাগরাগিণী চিনতেন না, কিন্তু যে কোন বড় ওস্তাদের গান কানে শুনে নিজের কণ্ঠে প্রকাশ করতে পারতেন। হয়তো তিনি ছিলেন জাতিস্মর, তাই তাঁর কাজে লেগেছিল পূর্বজন্মের সঙ্গীত সাধনা। এ ছাড়া তাঁর আশ্চর্য শক্তির আর কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না।
কিন্তু সুকণ্ঠী ইন্দুবালা গায়িকা হননি এমন দৈবী মায়ার লীলায়। তিনি ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করেছেন সৎগুরুর অধীনে থেকে দীর্ঘকালব্যাপী সাধনার দ্বারা। তাঁর প্রথম গুরু ছিলেন প্রসিদ্ধ ওস্তাদ গৌরীশঙ্কর। এই সঙ্গীতবিদের কাছে আগেকার আরো অনেকে শিক্ষালাভ ক’রে যশস্বী হয়েছিলেন। তারপর গহরজান, এলাহি বক্স ও জমীরুদ্দীন খাঁ প্রভৃতি তাঁকে গান শেখাবার ভার গ্রহণ করেন। সুতরাং ইন্দুবালার সঙ্গীতকুশলতা যে সুদৃঢ় ভিত্তির উপরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, একথা জোর ক’রেই বলা চলে।
স্বর্গীয় ওস্তাদ জমীরুদ্দীন খাঁ ছিলেন আমার বিশেষ বন্ধু ও স্নেহভাজন। তাঁরও ফরমাসে মাঝে মাঝে আমাকে গান রচনা করতে হয়েছে এবং তার পরিবর্তে তিনি আমাকে শুনিয়েছেন অসংখ্য সঙ্গীত। যখন-তখন অযাচিতভাবে আমার বাড়ীতে এসে হাজির হয়েছেন এবং প্রায়ই শেষ-রাত্রি পর্যন্ত অশ্রান্তভাবে গেয়ে গিয়েছেন গানের পর গান। সব রকম গানই তিনি গাইতে পারতেন, কিন্তু বিশেষ ক’রে ঠুংরি গানে তাঁর জুড়ি মেলা ভার ছিল। সুরকার হিসাবে নজরুল ইসলামও তাঁর কাছে ঋণী। জমীরুদ্দীনের মুখে প্রায়ই ইন্দুবালার সুখ্যাতি শুনতুম। বাংলা দেশের গায়িকাদের মধ্যে ইন্দুবালার শক্তির উপরে ছিল তাঁর অটুট আস্থা।
সেকালের অনেক নটী এবং গায়িকা ছিলেন নিরক্ষর বা অশিক্ষিত। কোন কোন গায়ক এবং বিখ্যাত অভিনেতা পর্যন্ত
১৯৯