বড় পত্রিকাওয়ালাও লেখার জন্য পারিশ্রমিক দিতেন না বা দিতে পারতেন না। এবং তখনকার মাসিক সাহিত্যের অধিকাংশ প্রখ্যাত লেখকেরও রচনা ছিল না অর্থকরী। সম্পাদকরা রচনা নির্বাচন করতেন না, বেছে বেছে করতেন নামজাদা লেখক নির্বাচন। তারপর দরকার হ’ত কাকুতি, উপরোধ, চাটুবাক্য এবং বারংবার তাগাদা। লেখকদের উপরোধে ঢেঁকি গিলতে হ’ত অবশেষে। রচনা সংগ্রাহকদের হ’তে হ’ত দস্তুরমত নাছোড়বান্দা। ব্রজেন্দ্রনাথ বোধ করি এই শ্রেণীরই সংগ্রাহক ছিলেন। কারণ কবিবর দেবেন্দ্রনাথ সেন “জাহ্নবী”র জন্যে একটি কবিতা রচনা ক’রে তার নাম দিয়েছিলেন “ব্রজেন্দ্রডাকাত”। যতদূর মনে পড়ে, কবিতাটি ছিল দ্ব্যর্থভাবব্যঞ্জক।
তারপর ব্রজেন্দ্রনাথ নিয়মিতরূপে দেখা দিতে লাগলেন অমূল্যবাবুর বৈঠকে। রচনা করতে লাগলেন ঐতিহাসিক প্রবন্ধের পর প্রবন্ধ। অমূল্যবাবুর উপদিষ্ট প্রণালী অনুসারেই তিনি কাজ করতে লাগলেন। কতকগুলি প্রবন্ধ সংগ্রহ ক’রে “বাঙ্গলার বেগম” নামে একখানি পুস্তকও প্রকাশ করলেন। তাঁর অনুরোধে ঐ পুস্তকের জন্যে একখানি ইংরেজী ঐতিহাসিক পত্রিকার চিত্র অবলম্বন ক’রে আমি একখানি ছবি এ’কে দিয়েছিলুম ব’লে স্মরণ হচ্ছে।
নিজেকে উচিতমত তৈরি ক’রে তোলবার জন্যে তাঁর ছিল বিপুল আগ্রহ এবং প্রভূত প্রযত্ন। সে সময়ে বাংলা দেশে এমন কয়েকজন লেখক ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করতেন যাঁদের মতামতই কেবল একদেশদর্শী হ’ত না, যাদের অনুসন্ধিৎসাও ছিল না বিশেষ প্রবল। আমি ঐতিহাসিক নই, ইতিহাসের শিক্ষার্থী মাত্র—ইংরেজীতে যাকে বলে novice। কিন্তু আমিও এখনকার একাধিক নামজাদা লেখকের রচনার মধ্যে ঐতিহাসিক গলদ আবিষ্কার করতে পারি ভূরি পরিমাণেই।
অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় একজন ভালো ঐতিহাসিক, সন্দেহ নেই। কিন্তু তাঁরও মধ্যে সব সময়ে সত্যকার ঐতিহাসিকের উপযোগী দৃষ্টিভঙ্গী ও অপক্ষপাতিত্ব দেখতে পাওয়া যায় না। সিরাজদ্দৌলার চরিত্রের কালো দিকটার উপরে চূণকাম করবার কোন চেষ্টাই করতে
২০৪