তিনি বাকি রাখেননি। তারপর পল্লবিত ভাষা, অশোভন উচ্ছ্বস এবং দুর্বল সমালোচনাশক্তি প্রভৃতির জন্যে অধিকাংশ বাঙালী লেখকই বিজ্ঞানসম্মত প্রণালীতে ইতিহাস রচনা করতে পারেন নি। সম্ভবতঃ এই সব ত্রুটিবিচ্যুতি উপলব্ধি ক’রেই ব্রজেন্দ্রনাথ শিষ্যের মত এমন দুইজন কীর্তিমানের কাছে গিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন, বাঙালী ঐতিহাসিকদের মধ্যে যাঁরা শীর্ষস্থান অধিকার ক’রে আছেন। তাঁরা হচ্ছেন রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও স্যর শ্রীযদুনাথ সরকার। বিশেষ ক’রে শেষোক্ত গুণীর দ্বারাই তিনি হয়েছেন অধিকতর প্রভাবান্বিত। স্যর যদুনাথের নির্দেশ তাঁর কাছে হয়েছে গরুবাক্যের সামিল। তিনি সাধন-পথে কোন কাজ আধাখেঁচড়া অবস্থায় রেখে দ্রুতবেগে এগিয়ে যেতে চাননি, তিনি অগ্রসর হয়েছেন দীর্ঘকাল ধ’রে ধীরে ধীরে, অটল ধৈর্য ও নিষ্ঠার সঙ্গে। হংসশাবকরা জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই সন্তরণে দক্ষ হয়, অনেক স্বভাবকবি নিরক্ষর হয়েও কবিতা রচনা করতে পারেন এবং গায়কও যে সা-রে-গা-মা ও রাগরাগিণী না চিনেও প্রথম শ্রেণীর ওস্তাদদের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গিয়েছেন স্বর্গীয় মৈজুদ্দীন খাঁ। কিন্তু কেউ ঐতিহাসিক হ’তে পারেন না সহসা বা দুই-চার-দিনের মধ্যে অবলীলাক্রমে। নাবালক অবস্থা থেকে সাবালক অবস্থায় যেতে দরকার হয় তাঁর দীর্ঘকাল এবং পোড়াতে হয় প্রচুর কাঠখড়।
লেখক হন দুই শ্রেণীর। যাঁদের দৃষ্টি এগিয়ে যাবার চেষ্টা করে বর্তমান থেকে ভবিষ্যতের দিকে এবং যাঁদের দৃষ্টি বর্তমান থেকে পিছিয়ে যায় অতীতের দিকে। প্রথমোক্ত লেখকরা কল্পনা বা অনুমানের সাহায্যে ভবিষ্যৎকে দেখতে চান। শেষোক্ত শ্রেণীর লেখকরা কল্পনার কাছ থেকে কোন সাহায্যই লাভ করেন না, পৃথিবীতে এর আগে যে-সব ঘটনা সত্য সত্যই ঘটেছে ও ঘটনাস্থলে দেখা দিয়েছে যে সব পাত্র-পাত্রী, তাঁরা বলতে পারেন কেবল তাঁদেরই কথা এবং তাঁদেরই বলি আমরা ঐতিহাসিক।
কিন্তু যাঁরা পুরাবৃত্ত নিয়ে আলোচনা করেন, ব্রজেন্দ্রনাথ আর নেই—তাঁদের দলে। এখন সাহিত্য-জীবনের প্রথম যুগে তাঁরও
২০৫