বড়দের পত্রিকা “ভারতী”তে, কিন্তু ছোটরাও তা সাগ্রহে পাঠ করত এবং পড়ে আনন্দলাভ করত বড়দেরও চেয়ে বেশী। সুরেশচন্দ্র সমাজপতিকে আকৃষ্ট করেছিল এই “রাজকাহিনী”রই শব্দচিত্রগুলি। অবনীন্দ্রনাথের “ভূতপত্রীর দেশে”ও যেখানে-সেখানে পাওয়া যাবে অপূর্ব শব্দচিত্র, সেগুলি ভুলিয়ে দেয় ছেলে-বুড়ো সবাইকেই।
অবনীন্দ্রনাথের সমগ্র রচনার বিস্তৃত সমালোচনা করবার জায়গা এখানে নেই। লিখেছেন তিনি অনেক: গল্প, কাহিনী, নক্সা, হাস্যনাট্য, ছড়া এবং প্রবন্ধ প্রভৃতি। প্রত্যেক বিভাগেই আছে তাঁর বিশিষ্ট হাতের বিশদ ছাপ। তাঁর নাম না ব’লে তাঁর যে কোন রচনা অন্যান্য লেখকদের রচনাস্তূপের মধ্যে স্থাপন করলেও তাকে খুঁজে বার করা যেতে পারে অতিশয় অনায়াসেই— এমনি স্বকীয় তাঁর রচনাভঙ্গি। সে ভঙ্গি অননুকরণীয়। রবীন্দ্রনাথ ও দ্বিজেন্দ্রলালের রচনাভঙ্গি অননুকরণ ক’রে অনেকে অল্পবিস্তর সার্থকতা লাভ করেছেন, কিন্তু অবনীন্দ্রনাথের লিখন-পদ্ধতির নকল করবার সাহস কারুর হবে ব’লে মনে হয় না।
ছেলেবেলায় “সাধনা” পত্রিকায় অবনীন্দ্রনাথের আঁকা ছবির প্রতিলিপি দেখি সর্বপ্রথমে। ছবিগুলি মুদ্রিত হ’ত শিলাক্ষরে (লিথোগ্রাফ)। রবীন্দ্রনাথের কবিতা এবং তাই অবলম্বন ক’রে ছবি। আমাদের খুব ভালো লাগত। কিন্তু তাদের ভিতরে পরবর্তী যুগের অবনীন্দ্রনাথের সুপরিচিত চিত্রাঙ্কন-পদ্ধতি কেউ আবিষ্কার করতে পারবেন না। প্রথম জীবনে তিনি য়ুরোপীয় পদ্ধতিতেই চিত্রাঙ্কন করতে অভ্যস্ত ছিলেন এবং শিক্ষা পেয়েছিলেন ইতালীয় শিল্পী গিলহার্ডি ও ইংরেজ শিল্পী পামারের কাছে। অবনীন্দ্রনাথের তখনকার আঁকা ছবি তাঁর বাড়ীতে এখনো রক্ষিত আছে।
প্রপিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুরের পুস্তকাগারে একখানি পুঁথির মধ্যে মোগল যুগের ছবি দেখে হঠাৎ তিনি দিব্যদৃষ্টি লাভ করেন, তাঁর চোখ ফিরে আসে বিদেশ থেকে স্বদেশের দিকে। কিছুদিন ধ’রে চলে ভারতীয় শিল্পসম্পদ নিয়ে নাড়াচাড়া। প্রাচ্য চিত্রকলা পদ্ধতিতে “কৃষ্ণলীলা” অবলম্বন ক’রে এঁকে ফেললেন কয়েকখানি ছবি। সেগুলি দেখে শিক্ষক পামার চমৎকৃত হয়ে বললেন, “তোমার
৮