বৈঠকও আয়তনে বড় ছিল না। কিন্তু সেখানে প্রত্যহ যে সব বিষয় নিয়ে (কখনো কখনো উত্তপ্ত) আলোচনা চলত, তার মধ্যে থাকত এদেশী এবং বিদেশী সাহিত্য ও শিল্পের তাবৎ বিভাগ।
বাংলা সাহিত্যক্ষেত্রে তখন রবীন্দ্রনাথ, দিজেন্দ্রলাল, দেবেন্দ্রনাথ সেন, অক্ষয়কুমার বড়াল ও প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় প্রভৃতি প্রথম শ্রেণীর সুপ্রতিষ্ঠিত লেখকদের ভূরি ভূরি দানের অভাব ছিল না এবং রবীন্দ্রনাথের প্রভাবের মধ্যে থেকেই নূতন যুগের তিনজন কবিও—যতীন্দ্রমোহন, সত্যেন্দ্রনাথ ও করুণানিধান—ধীরে ধীরে আরোহণ করছিলেন খ্যাতির সোপানে। কিন্তু নূতেন যগের মান রাখতে পারেন এমন একজন প্রতিভাবান কথাশিল্পীর অভাব অনভব করতেন সকলেই। সাহিত্যের বিভিন্ন বিভাগে নিযুক্ত থেকে রবীন্দ্রনাথ উপন্যাস রচনার জন্যে অবসর পেতেন অল্প-যদিও অন্যান্য বিভাগের মত কথাসাহিত্য-ক্ষেত্রেও তিনিই ছিলেন বাংলাদেশের প্রধান শিল্পী এবং সে গৌরব থেকে আজও কেউ তাঁকে বিচ্যুত করতে পারেননি। লোকসাধারণের মানসক্ষধা নিবৃত্তির পক্ষে তাঁর দান অমৃতায়মান হ’লেও চাহিদা হিসাবে অপ্রচুর ছিল। মন বলত— “আরো চাই, আরো।” কিন্তু কত দিক নিয়ে রবীন্দ্রনাথের হাত জোড়া, একান্তভাবে একদিক নিয়ে নিযুক্ত থাকবার সময় তাঁর কই?
ঠিক এই সময়েই “যমুনা” পত্রিকার মাধ্যমে প্রকাশ্যভাবে দেখা দিলেন শরৎচন্দ্র। ক্রমে ক্রমে প্রকাশিত হ’তে লাগল “রামের সুমতি”, “চন্দ্রনাথ”, “পথনির্দেশ” ও “বিন্দর ছেলে” প্রভৃতি বড় গল্প ও উপন্যাস। তার কয়েক বৎসর আগে (১৩১৪ সালে) “ভারতী” পত্রিকায় “বড়দিদি” নামে শরৎচন্দ্রের একটি পরাতন রচনা প্রকাশিত হয়েছিল বটে, কিন্তু তাঁর অজ্ঞাতসারেই। সুতরাং অনায়াসেই বলা যেতে পারে যে, “ভারতী”র পৃষ্ঠায় শরৎচন্দ্র প্রথম আত্মপ্রকাশ করেননি।
এর অল্পদিন পরেই “যমুনা”র কর্ণধার স্বর্গীয় ফণীন্দ্রনাথ পাল পত্রিকা সম্পাদনায় সাহায্য করবার জন্যে আমাকে আমন্ত্রণ করলেন। আমিও গিয়ে হাজির হলুম “যমনা”র বৈঠকে। তারপর আমাদের দলের বাকি কয়জনও আসন পাতলেন সেই আসরেই। তারপর রুমেই
২০৯