একখানি ক্ষুদ্র পুস্তিকাও যন্ত্রস্থ হয়েছে—নাম তার “আমাদের জাতীয় ভাব।” বঙ্গবিভাগের পরে সারা দেশে তখন সুরু হয়েছে প্রবল স্বদেশী আন্দোলন এবং তখনকার অধিকাংশ যুবকের মত আমিও সেই আন্দোলনে মেতে উঠেছি। তখন সরকারী বাগানগুলিতে বৃটিশ-সিংহকে বাক্যবন্দুকের বুলেটের দ্বারা ঘায়েল করবার জন্যে প্রতিদিন বৈকালেই অগণ্য সভার আয়োজন করা হ’ত এবং আর সকলকার মত আমিও ছিলুম সে সব সভার একজন নিয়মিত শ্রোতা।
বিডন বাগানে টহলরাম নামে এক পাঞ্জাবী ভদ্রলোকের নেতৃত্বে প্রত্যহই হ’ত সভার অধিবেশন। তিনি বাংলা জানতেন না, কিন্তু ইংরেজীতে “Curzon and Curzonians"-এর বিরুদ্ধে যে সব গরম গরম বচন ঝাড়তেন, জনসাধারণের পক্ষে সেগুলি হ’ত অত্যন্ত শ্রবণরোচক। টহলরামের পর সেখানে আরো কেউ কেউ বক্তৃতা দিতেন এবং তাঁদের মধ্যে প্রভাত ছিলেন অন্যতম। বয়সে তখন তাঁকে কিশোর বলাই চলত, কিন্তু সেই বয়সেই তাঁর মুখের উপরে বিরাজ করত দাড়িগোঁফের গভীর অরণ্য। এবং সেই বয়সেই তিনি জনসভায় অনর্গল বক্তৃতা দিতে পারতেন অকুতোভয়ে।
কেমন ক’রে আমরা দু’জনেই যে দু’জনের দিকে আকৃষ্ট হলুম তা আর স্মরণে আসে না। তবে এইটুকু আমার মনে আছে যে, আমার রচিত পুস্তিকাখানি তিনি সভার শ্রোতাদের মধ্যে হাতে হাতে বিক্রয় করবার ভার নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই হয়নি, কারণ টহলরাম হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে সমস্ত ভেস্তে দিলেন। কারুর কারুর মুখে শুনলুম, তিনি ছিলেন ইংরেজদের গপ্তচর। সম্ভবতঃ মিথ্যা গুজব।
কিন্তু ইতিমধ্যেই প্রভাতের সঙ্গে আমার বন্ধুত্বের সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়ে উঠেছে। কখনো টহলরামের বাসায় তাঁদের কার্যালয়ে গিয়ে আমি তাঁর সঙ্গে গল্প ক’রে আসতুম এবং কখনো তিনি এসে দেখা দিতেন আমার পাথুরেঘাটার বাড়ীতে।
তারপর “জাহ্নবী” কার্যালয়ে গিয়ে প্রভাতের আরো কোন কোন বিশেষত্বের সঙ্গে পরিচিত হলুম। অল্প বয়সেই তিনি সমসাময়িক পাশ্চাত্য সাহিত্যকে রাখতে পেরেছিলেন নিজের নখদর্পণে। তিনি
২১২