পাতা:এখন যাঁদের দেখছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/২২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমাদের দল

ছিলেন প্রায় সর্বদর্শী, প্রেমাঙ্কুর তাঁকে উপাধি দিয়েছিলেন “সবজান্তা লরেন্স।” কি সাহিত্য, কি ললিতকলা, কি রাজনীতি, কি ইতিহাস, কি নাট্যশিল্প, কি খেলাধূলো, প্রত্যেক বিভাগেই নূতন নূতন তথ্য সংগ্রহের জন্যে তাঁর আগ্রহ ছিল উদগ্র। তর্ক এবং গলাবাজিতেও তিনি যে কি-রকম তুখড় ছিলেন, শ্রীপ্রেমাঙ্কুর আতর্থীর প্রসঙ্গে আগেই দিয়েছি তার অল্পবিস্তর নমুনা।

 বাংলাদেশে যে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নামে একজন অদ্বিতীয় লেখক আত্মপ্রকাশ করেছেন, “জাহ্নবী” কার্যালয়ে এসে এ খবর সর্বপ্রথমে দেন প্রভাতচন্দ্রই। সে সময়ে এই সংবাদ দিকে দিকে প্রচার করবার জন্যে প্রভাতের যে বিপুল আগ্রহ লক্ষ্য করেছি তাও উল্লেখযোগ্য। বিখ্যাত কবি বিজয়চন্দ্র মজুমদারের কাছে গিয়ে তিনি শরৎচন্দ্রের রচনা পাঠ ক’রে শুনিয়ে আসেন। বিস্মিত ও মুগ্ধ বিজয়চন্দ্র সেই অভাবিত আবিষ্কারের সংবাদ জানান কবিবর ও নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলালকে এবং তিনিও শরৎচন্দ্রের অসাধারণ রচনাচাতুর্যের পরিচয় পেয়ে তাঁর ভক্ত হয়ে পড়েন। প্রভাতচন্দ্র প্রভৃতির মৌখিক বিজ্ঞাপনের মহিমাতেই শরৎচন্দ্রের নাম প্রায় বিদ্যুৎ গতিতেই চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

 কিন্তু প্রভাতচন্দ্র চিরদিনই মুখফোড়। যত বড় লোকই হোন, কারুর যুক্তিহীন উক্তিই তিনি সহ্য করতে একান্ত নারাজ। আমি যখন মহারাজা জগদিন্দ্রনাথ রায় ও অমূল্যচরণ বিদ্যাভূষণ সম্পাদিত “মর্মবাণী” পত্রিকার সহকারী সম্পাদক, সেই সময়ে তাঁর কার্যালয়ে ব’সে শরৎচন্দ্র একদিন বললেন, “রবীন্দ্রনাথ “ঘরে-বাইরে” লিখেছেন। তোমরা দেখে নিও, আমি এবারে যে উপন্যাস লিখব, “ঘরে-বাইরে”র চেয়ে ওজনে তা একটাও কম হবে না।”

 প্রভাতচন্দ্র অমনি তাঁর মুখের উপরে ব’লে বসলেন, “সবুজ পত্রে রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস এখনো শেষ হয়নি, আর আপনার উপন্যাস এখনো লেখাই হয়নি। তবু, এমন কথা আপনি কি ক’রে বলছেন!” শরৎচন্দ্র কোন যুৎসই জবাব দিতে পারলেন না এবং তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীও সফল হয়নি। তাঁর পরের উপন্যাসের নাম “গৃহদাহ”। তা “ঘরে-বাইরে”র সমকক্ষ হ’তেও পারেনি, বরং

২১৩