শুনেছি এ কথা। কিন্তু সাহিত্যের নেশা হচ্ছে আফিমের মৌতাতের মত; ধরলে আর ছাড়ান পাবার উপায় থাকে না। অমলচন্দ্রও সাহিত্যচর্চা ও আমাদের দল ছাড়তে পারেননি। “জাহ্নবী”র আসর থেকে উঠে গিয়ে ব’সেছেন “ভারতী”র বৈঠকে। এবং চিরদিনই বন্ধুরূপে নির্বাচন করেছেন সাহিত্যিক ও শিল্পীদেরই। মাঝে মাঝে তাঁর বাড়ীতেও গিয়েছি এবং তখনও আমাদের আলাপ্য বিষয় হ’ত কেবল সাহিত্য ও শিল্পই।
রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় নিজেকে সাহিত্যিক নয়, সাংবাদিক ব’লেই মনে করতেন। “প্রবাসী”র জন্যে লিখতেন কেবল বিবিধ সংবাদ। কিন্তু সাহিত্য বিচারে যে তাঁর অসামান্য শক্তি ছিল, সম্পাদকরূপে সেটা তিনি বিশেষভাবেই প্রমাণিত ক’রে যেতে পেরেছেন। সুরেশচন্দ্র সমাজপতি প্রথম জীবনে গুটিকয় ছোট গল্প রচনা করেছিলেন, কিন্তু আজ আর বাজারে তার চাহিদা নেই। আর আছে তাঁর কিছু কিছু চুটকি সমালোচনা, তারও কোন স্থায়ী মূল্য নেই। অথচ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অক্ষয় হয়ে থাকবে তাঁর নাম। কিন্তু তিনি যে ছিলেন কত বড় রসবেত্তা, তাঁর “সাহিত্য” সম্পাদনার মধ্যেই আছে তার অতুলনীয় প্রমাণ। এক একজন লোক সাহিত্য সৃষ্টি না ক’রেও সাহিত্য-সমাজে মধ্যমণির মত বিরাজ করতে পারেন।
অমলচন্দ্রকে এই শ্রেণীর মধ্যে গণ্য করা চলে। তিনি একজন প্রথম শ্রেণীর সাহিত্যবোদ্ধা, সাহিত্য ও চারুকলা নিয়ে মুখে মখে অনর্গল আলাপ-আলোচনা করতে পারেন এবং রচনাশক্তিতেও তিনি বঞ্চিত নন। কিন্তু নিজের রচনা নিয়েই সময় কাটাবার দিকে তাঁর তেমন ঝোঁক নেই। “জাহ্নবী”র জন্যে তিনি কিছু কিছু লিখেছেন ব’লে মনে পড়ছে। কিন্তু লেখার চেয়ে ভালো ক’রে পত্রিকা পরিচালনার দিকেই তাঁর আগ্রহ ছিল বেশী। “জাহ্নবী”তে হাতমক্স ক’রে তারপর তিনি যখন “মিউনিসিপ্যাল গেজেটে”র সম্পাদকরূপে দেখা দেন, তখন তাঁর বিশেষ গুণপনা আকৃষ্ট করেছিল সকলের দৃষ্টি। একখানি সাধারণ পত্রিকাকে তিনি ক’রে তুলেছিলেন অনন্যসাধারণ। এবং সুযোগ পেলেই ওর ভিতর দিয়েই তিনি প্রকাশ করতেন সাহিত্য
২১৭