আটাশ
দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরী
একদিন “বসুমতী” কার্যালয়ে গিয়েছি। সম্পাদকের ঘরে প্রবেশ ক’রে দেখলুম টেবিলের ধারে তাঁর সামনে বসে আছেন জনৈক হৃষ্টপুষ্ট প্রাচীন ভদ্রলোক। মার্জিত চেহারা, মুখে-চোখে বিশিষ্টতার স্পষ্ট পরিচয়। চিনতে পারলুম না বটে, কিন্তু তাঁকে প্রফেসর ব’লেই মনে হ’ল। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখেছি, প্রফেসরদের চিনিয়ে দেয় কেবল তাঁদের মুখ। বহু কবি ও লেখক বর্ণচোরা চেহারা অধিকারী। দেবেন্দ্রনাথ সেন, অক্ষয়কুমার বড়াল, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ও যতীন্দ্রমোহন বাগচী প্রভৃতিকে কেউ চেহারা দেখে কবি ব’লে ধরতে পারত না। জীবিত কবিদের মধ্যেও এমন লোকের অভাব নেই। যেমন করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায়, মোহিতলাল মজুমদার ও শ্রীকালিদাস রায় প্রভৃতি।
সম্পাদক সুধালেন, “হেমেনদা, এঁকে চেনেন?”
আমি মাথা নেড়ে জানালুম, না।
—“ইনি হচ্ছেন ডক্টর সুশীলকুমার দে।”
সুশীলকুমার! সানন্দে ঝুঁকে প’ড়ে তাঁর বাহুমূল ধ’রে বললুম, “ইনি যে আমার প্রথম যৌবনের বন্ধু!”
চোখের সুমুখে থেকে স’রে গেল কিছু কম চার যুগের পুরাতন পর্দা। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যখন সবে আত্মপ্রকাশ ক’রেছেন, সেই সময়ে “যমুনা” পত্রিকার বৈঠকে সুশীলকুমারের সঙ্গে প্রথম দেখা হয়। তখনও তিনি কৃতবিদ্য হ’লেও প্রখ্যাত ছিলেন না। তাঁর নাম বিদ্বজ্জনসমাজে সুপরিচিত।
সুশীলকুমার সহাস্যে বললেন, “আমাকে চিনতে তো পারেননি?”
বললাম, “আমরা ছিলাম যুবক, আজ হয়েছি বৃদ্ধ। এত কালের অদর্শনের পর আর কি মানুষ চেনা যায়?”
২২২