সুশীলকুমার “ভারতী”র বৈঠকের কথা তুলে বললেন, “অমন চমৎকার বৈঠক আর হবে না।”
সত্য কথা। আর হবে না। আজকের তরুণ সাহিত্যিকরা উচিত-মত একজোট হবার অভ্যাস ক্রমেই বেশী ক’রে হারিয়ে ফেলছেন। “যমুনা”, “মর্মবাণী” ও বিশেষ ক’রে “ভারতী” পত্রিকার সাহিত্য-বৈঠকেই আমি আধুনিক কালের অধিকাংশ সাহিত্যিক ও শিল্পীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করবার সুযোগ পেয়েছিলুম। এবং সেইজন্যেই আমার এই আলোচনায় বার বার ঐ সব বৈঠকের প্রসঙ্গ এসে পড়ে।
“ভারতী” কার্যালয়ের ঐ বৈঠকেই স্বর্গীয় সুলেখক সুরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একটি তরুণ যুবক মাঝে মাঝে আসতে লাগলেন। নাম তাঁর দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরী। শুনলাম, তিনি তাজহাটের রাজার ভাগিনেয়। চিত্রবিদ্যা শিক্ষা করেন। অবনীন্দ্রনাথের ছাত্র। তাঁর চেহারা, ভাবভঙ্গি ও কথাবার্তা সপ্রতিভ।
দেবীপ্রসাদের দেহ দেখেই বুঝতে বিলম্ব হ’ল না যে, তিনি নিয়মিতভাবে ব্যায়াম অভ্যাস করেন। বাংলাদেশের অধিকাংশ কলমবিলাসী কবি ও শিল্পীদের ঠুনকো দেহ দেখলেই সন্দেহ হয়, যেন তাঁরা তথাকথিত চকোরের মত কেবল জ্যোৎস্না পান ক’রেই বে’চে থাকতে চান। কারুর কারুর দেহ আবার দস্তুরমত মেয়েলী। তাঁরা কথা কন নাকী সুরে, হাসেন মুচকি হাসি, চলেন কোমর দুলিয়ে। কিন্তু দেবীপ্রসাদের মত বলিষ্ঠ, পেশীবদ্ধ ও পুরুষোচিত চেহারা বাঙালী কবি ও শিল্পীদের মধ্যে আমি আর দ্বিতীয় দেখিনি। রাস্তা দিয়ে যখন হাঁটতেন, অপরিচিত লোকেরা নিশ্চয়ই তাঁকে পালোয়ান ছাড়া আর কিছু ব’লে মনে করতে পারত না।
এক একদিন আমাদের অনুরোধে তিনি গায়ের জামা খুলে ফেলে যখন মাংসপেশীর খেলা দেখাতেন, আমরা চমৎকৃত হয়ে তাকিয়ে থাকতুম তাঁর পরিপুষ্ট দেহের দিকে। কণ্ঠের, বক্ষের, উদরের ও বাহুর সমস্ত মাংসপেশীই ছিল তাঁর আজ্ঞাধীন।
যে হাতে গদাই মানায় বেশী, সেই হাতই সুপটু ছিল সূক্ষ্ম তুলিকা-চালনায়, আবার সেই হাতেই একদিন সবিস্ময়ে দেখলুম
২২৩