পাতা:এখন যাঁদের দেখছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/২৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
এখন যাঁদের দেখছি

ছোট্ট একটি বাঁশের বাঁশী!

 বললুম, “আরে দেবী, তুমি আবার বাঁশী বাজাতেও পারো নাকি?”

 দেবীপ্রসাদ হেসে বললেন, “পারি।”

 —“বাজাও তো, শুনি।”

 বিনাবাক্যব্যয়ে মাথাটি কাত ক’রে তিনি দিলেন বাঁশীতে ফুঁ। মুরলীগুঞ্জনে খেলা সুর‍ু হ’ল সপ্ত-গ্রামের। সেই বিচিত্র ধ্বনিতরঙ্গের মধ্যেও আবিষ্কার করলুম একজন অসামান্য শিল্পীকে। তারপর একাধিক গানবাজনার আসরে শুনেছি দেবীপ্রসাদের বাঁশের বাঁশী। সৌখিন হ’লেও তিনি নিপুণ বংশীবাদক ব’লে খ্যাতিলাভ করেছিলেন।

 পুরুষোচিত দেহের মধ্যে থাকা উচিত পুরুষোচিত মন। তাই পরে তিনি বন্দুক ধারণ করেছেন শুনে বিস্মিত হইনি। শিকারীর বেশে বনে বনে ঘুরে বেড়ান। হাতী-গণ্ডার হয়তো হাতের কাছে পাননি, তবে একাধিক ব্যাঘ্রপুঙ্গব পঞ্চত্বলাভ করেছে তাঁর হাতে। এবং নিজেই তিনি দিয়েছেন এ সন্দেশ। মুখে নয়, বন্দুকচালনার পর লেখনীচালনা ক’রে। তাঁর লেখা শিকারকাহিনী আমার ভালো লাগে। পরিণত বয়সে লেখক-রূপেও আত্মপ্রকাশ ক’রে তিনি রচনাকার্যে নিযক্ত হয়েছেন। কেবল শিকারকাহিনী নয়, গল্প ও উপন্যাসও। তাঁর ভাষা জোরালো।

 প্রথমে সকলে তাঁকে গ্রহণ করেছিল উদীয়মান চিত্রকর ব’লে। তারপর সকলে জেনেছে তিনি একজন উচ্চশ্রেণীর ভাস্কর। তাহ’লে দেখা যাচ্ছে মানষটি বহুরূপী। চিত্রকরের তুলি, ভাস্করের বাটালি, লেখকের কলম, সঙ্গীতবিদের বাঁশী, ব্যায়মবীরের মুগুর ও শিকারীর বন্দুক, এ-সবেরই সদ্ব্যবহার করতে পারেন দেবীপ্রসাদ। একাধারে তাঁর মনের উপরে কাজ করেছে ক্ষত্রধর্মের সঙ্গে চিত্র, ভাস্কর্য, সাহিত্য ও সঙ্গীত প্রভৃতি চার‍ুকলা। ঠিক এই শ্রেণীর শান্ত ও সব্যসাচী শিল্পী বাংলাদেশে তো দেখাই দেননি, ভারতের অন্য কোন প্রদেশেও আছেন ব’লে মনে হয় না।

 চিত্রকলায় কয়েকজন প্রথম শ্রেণীর বাঙালী শিল্পীর নাম করা

২২৪