নিয়ে অনশীলন ক’রে চক্ষু তাঁদের অনেকটা শিক্ষিত হ’য়ে উঠেছে। কিন্তু আমি তখন ছিলুম সম্পর্ণরূপে বিলাতী ছবি দেখতেই অভ্যস্ত, এমন কি য়ুরোপীয় পদ্ধতিতে চিত্রবিদ্যা শেখবার জন্যে সরকারি আর্ট স্কুলে ছাত্ররূপে যোগদানও করেছি। কাজেই ছবিগুলি আমার কাছে এনে দিলে নূতন আবিষ্কারের বার্তা। সেইদিন থেকেই আমি হয়ে পড়লুম অবনীন্দ্রনাথের পরম ভক্ত।
মানুষটিকে চোখে দেখবার সাধ হ’ল এবং সুযোগও মিলল অনতিবিলম্বেই। খবর পেলাম, অবনীন্দ্রনাথদের ভবনে শিল্প-সম্পর্কীয় এক সভার অধিবেশন হবে। যথাসময়ে সেখানে গিয়ে উপস্থিত হলুম। অবনীন্দ্রনাথকে দেখলুম। শান্ত, মিষ্ট মুখ। সহজ সরল ভাব, কোন রকম ভঙ্গি নেই। ভালো লাগল মানুষটিকে।
সভায় বউবাজার চিত্র-বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ (তাঁর নাম কি মম্মথবাবু?) বক্তৃতা দিতে উঠে অবনীন্দ্রনাথের গুণগ্রামের পরিচয় দিলেন। উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধরীও (ইউ রায়) দু-চার কথা বললেন। শুনলুম ওঁরা একটি শিল্প-সম্পর্কীয় প্রতিষ্ঠান গঠন করতে চান এবং রবীন্দ্রনাথ তার নামকরণ করেছেন “কলা-সংসদ”। কিন্তু তারপর কি হয়েছিল জানি না, তবে “কলা-সংসদ” সম্বন্ধে আর কোন উচ্চবাচ্য শুনতে পাই নি।
তারপর কিছুদিন যায়। “প্রবাসী” ও “ভারতী” পত্রিকায় প্রকাশিত হ’তে লাগল অবনীন্দ্রনাথের ছবির পর ছবি। অনেককে তারা করলে আনন্দিত। এবং অনেককে আবার ক’রে তুললে দস্তুরমত ক্রুদ্ধ; বিলাতী শিক্ষাগুণে তাঁরা এমন মোহাবিষ্ট হয়ে পড়েছিলেন যে, ঘরের ছেলে হয়েও ঘরোয়া রূপের মর্যাদা উপলব্ধি করতে পারলেন না। যে সুরেশচন্দ্র সমাজপতি অবনীন্দ্রনাথের রচনার শব্দচিত্রগুলি দেখে প্রশংসা করেছিলেন, অবনীন্দ্রনাথের আঁকা প্রত্যেক চিত্রই যেন তাঁর চোখের বালি হয়ে উঠল। তিনি প্রথম শ্রেণীর চিত্র-সমালোচক (যা তিনি ছিলেন না) সেজে বারংবার উষ্মা প্রকাশ ও ব্যঙ্গবাণ নিক্ষেপ করতে লাগলেন। গালিগালাজ যাদের পেশার মত, এমন আরো বহু ব্যক্তি যোগদান করলে সুরেশচন্দ্রের দলে। বাজার হ’য়ে উঠল সরগরম।
১০