কণ্ঠস্থ ক’রে ফেলতে ত্রুটি করেননি। হাতের ক্যামেরায় তুলে নেওয়া যায় কুলিদের জনবহুল বস্তীর হুবহু ফোটো। কিন্তু সেই সঙ্গে কুলিদের চিত্তবৃত্তি দেখাতে পারে কেবল মনের ক্যামেরাই। শৈলজানন্দও ব্যবহার করেছেন শেষোক্ত ক্যামেরা। তাঁর সুনির্বাচিত শব্দচিত্রে কুলিজীবনের যে সব বিচিত্র ও অপূর্ব দৃশ্য আমরা দেখেছি, আজ পর্যন্ত তা দেখাতে পারেননি আর কোন বাঙালী লেখক। বাইরের ফোটো, ভিতরের ফোটো। বাস্তবতার মধ্যে রোমান্স। কালো কয়লার গুঁড়োর ভিতরে আলো-করা হীরার টুকরো। শৈলজানন্দ কুলিবস্তির নিরতিশয় দারিদ্র্যের মধ্যেও আবিষ্কার করেছেন অভাবিত সাহিত্যসম্পদ।
শৈলজানন্দ নিজেই তাঁর আত্মপরিচয়। তখন আমি বললুম, “আপনার গল্প আমি পড়েছি। আমার খুব ভালো লাগে।”
শৈলজানন্দের সঙ্গে সেই হ’ল আমার প্রথম পরিচয়।
কয়লাখনির কুলিজীবন নিয়ে তিনি “মাসিক বসুমতী” তে প্রথম যে গল্প লিখেছিলেন, তখন তাঁর বয়স হবে কত? বাইশ কি তেইশের বেশী নয়। কিন্তু সেই বয়সেই লেখনীধারণ ক’রে তিনি দেখাতে পারতেন যথেষ্ট মুনশীয়ানা। অচিন্ত্য, প্রেমেন ও বুদ্ধদেব প্রভৃতির নাম তখনও অপরিচিত। শৈলজানন্দ তাঁদের চেয়ে বয়সেও বড় এবং নামও কিনেছেন তাঁদের আগে।
“কল্লোল” পত্রিকায় আত্মপ্রকাশ ক’রে তিনি খ্যাতি লাভ করেননি বটে, কিন্তু কিছুকালের জন্যে তিনিও “কল্লোলে”র দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর ছিল অতিশয় অর্থের অপ্রতুলতা এবং সে অনটন মেটাবার সাধ্য ছিল না “কল্লোলে”র। কাজেই অবশেষে দলছাড়া হয়ে তিনি “কালিকলমের” সম্পাদকের পদ গ্রহণ করেন এবং ঠিক ঐ কারণেই তাঁর পদানুসরণ করেন প্রেমেন্দ্রও।
তাঁর কয়লাকুঠীর গল্পগুলি পাঠ ক’রে আমরা পরস্পরের মধ্যে বলাবলি করতুম, এই একজন শক্তিশালী নূতন লেখক দেখা দিয়েছেন, যাঁর মধ্যে আছে প্রভূত সম্ভাবনার ইঙ্গিত। বাস্তবিক পাশ্চাত্য দেশের বহু লেখকই অনুরূপ শক্তিপ্রকাশ ক’রে একসঙ্গে পেয়েছেন লক্ষ্মী ও সরস্বতীর আশীর্বাদ। ডবলিউ ডবলিউ জেকব কেবল
২২৯