পাতা:এখন যাঁদের দেখছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/২৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সজনীকান্ত দাস

করি, কিন্তু আমার সমালোচনা তাঁদের মনের মত হয়নি বলে তাঁরা আমাকে শত্রু ব’লেই ধ’রে নিয়েছেন।

 প্রসঙ্গক্রমে এখানে আর একটা কথাও বলে নি। “বোবার শত্রু নেই”-এ উক্তি মিথ্যা। আমার এক বিখ্যাত ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু, আমার সঙ্গে পত্রালাপ ও বাক্যালাপ দুইই বন্ধ ক’রে দিয়েছেন, কারণ তাঁর রচনা সম্বন্ধে আমি ভালোমন্দ কিছুই বলিনি।

 অতঃপর যা বলছিলুম। আমার তো মনে হয়, ব্যক্তিগত আমি এবং সাহিত্যগত আমি—এই দুই আমিকে এক ব’লে স্বীকার না করলে যথেষ্ট ঝঞ্ঝাট ও হৃদয়দাহ থেকে অব্যাহতি লাভ করা যায়। সাহিত্যক্ষেত্রে ঐকমত্য নেই ব’লে বন্ধুর সঙ্গে বন্ধুর মনের অনৈক্য হবে কেন? আমি বেশ ভালো ক’রেই জানি, আমার কোন কোন বন্ধু লেখক হিসাবে আমাকে পছন্দ করেন না। কিন্তু সেজন্যে আমার মনে কোন গ্লানিই পুঞ্জীভূত হয়ে ওঠেনি, অম্লানবদনে তাঁদের সঙ্গে মেলামেশা করি, তাঁরা যে আমার লেখা ভালো বলেন না, এটা আমি জানি ব’লেও তাঁদের জানতে দিইনি। তাঁরা যে বন্ধুরূপে আমাকে পছন্দ করেন, আমার পক্ষে সেইটুকুই পরম লাভ। সকলের লেখা সকলের ভালো লাগে না। এ সত্য মেনে না নিলে পৃথিবীতে জীবনযাত্রা হয় অসহনীয়।

 আগে ছিলেন বন্ধু, পরে প্রতিকূল সমালোচনায় হয়ে দাঁড়ালেন শত্রুর মত,— এও যেমন দেখেছি, তেমনি এও দেখেছি যে, আগে বিরুদ্ধ সমালোচনায় আহত হয়ে পরে বন্ধুরূপে কাছে এসে কেউ কেউ আমার সঙ্গে করেছেন সৌহার্দ্যের সম্পর্ক স্থাপন। এও লক্ষ্য করেছি যে, শেষোক্ত শ্রেণীর বন্ধুদের সঙ্গে পরে মতের অমিল হ’লেও আর মনের অমিল হয় না। আমার এই রকম এক বন্ধু হচ্ছেন শ্রীসজনীকান্ত দাস।

 সেটা হচ্ছে ১৩৩৪ সাল। তখনও সজনীকান্তের সঙ্গে আমার চাক্ষুষ পরিচয় হয়নি, তবে এর-ওর মুখে শুনতুম, তিনি “প্রবাসী” পত্রিকার কার্যালয়ের কর্মচারী। তিনি এবং উক্ত পত্রিকার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শ্রীঅশোক চট্টোপাধ্যায় ও শ্রীহেমন্ত চট্টোপাধ্যায় “শনিবারের চিঠি” নামে একখানি পত্রিকা প্রকাশ করেন এবং মোহিতলাল

২৩৫