কিন্তু অবনীন্দ্রনাথ ছিলেন “যোগাসনে লীন যোগীবরে”র মত—নিন্দা-প্রশংসায় সমান অটল। ঐ সব আক্রমণের বিরুদ্ধে তাঁর মুখে ছিল না কোন প্রতিবাদ। তরঙ্গের ধারাবাহিক প্রহার চিরদিনই নিশ্চল ও নিস্তব্ধ হয়ে সহ্য করতে পারে সাগরশৈল। তিনি আত্মগত হয়ে বাস করতে লাগলেন নিজের পরিকল্পনার জগতে। দিনে দিনে নব নব রূপ সৃষ্টি ক’রে ভরিয়ে তুলতে লাগলেন রসজ্ঞ বিদ্বজ্জনদের চিত্ত।
মাঝে মাঝে তুলি ছেড়ে কলম ধরেন, যাদের অননুসন্ধিৎসু মন জানতে চায়, বুঝতে চায়, তাদের জানাতে এবং বোঝাতে ললিতকলার আদর্শ ও গুপ্তকথা। তাঁর সেই প্রবন্ধগুলিও প্রাচ্য চিত্রকলার রহস্যোদ্ঘাটনের পক্ষে অল্প সাহায্য করে নি। গঠন করলেন ইণ্ডিয়ান সোসাইটি অফ ওরিয়েণ্টাল আর্টস নামে একটি প্রতিষ্ঠান। সেখানে দেশীয় চিত্র সম্বন্ধে লোকসাধারণের চিত্তকে সচেতন ও শিক্ষিত ক’রে তোলবার জন্যে বাৎসরিক ছবির মেলা বসাবার ব্যবস্থা করা হ’ল। ওদিকে গভর্নমেণ্ট আর্ট স্কুলের অধ্যক্ষের আসরে আসীন হয়ে তিনি তৈরি ক’রে তুলতে লাগলেন দলে দলে নূতন শিল্পী। ফল যা হয়েছে তা সর্বজনবিদিত। তাঁর বিরুদ্ধবাদীরা বাংলার জমিতে যে বাক্যবিষবৃক্ষ রোপণ করেছিলেন, তা কোন ফলই প্রসব করতে পারে নি। জয় হয়েছে অবনীন্দ্রনাথেরই।
অবনীন্দ্রনাথের বিজয়গৌরব কেবল ভারতে নয়, স্বীকৃত হয়েছে ভারতের বাইরেও। কিন্তু যেখানে স্বার্থে স্বার্থে সংঘাত বাধে এবং পরস্পরবিরোধী আদর্শ দুটি সমান্তরাল রেখার মত থেকে পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হ’তে নারাজ হয়, সেখানে অপ্রীতিকর দৃশ্যের অবতারণা অবশ্যম্ভাবী।
ভারতবর্ষে প্রধানতঃ দুই শ্রেণীর শিল্পীর প্রভাব দেখা গিয়েছে। একদল কলকাতা চিত্র-বিদ্যালয়ের অনাগামী, আর একদল হচ্ছে বোম্বাই আর্ট স্কুলে শিক্ষিত। হ্যাভেল সাহেব ও অবনীন্দ্রনাথের তত্ত্বাবধানে আসবার আগে কলকাতার সরকারী চিত্র-বিদ্যালয়ের ছাত্ররা যে রকম শিক্ষালাভ ক’রে বেরিয়ে আসত, বোম্বাইয়ের শিল্পীদের দৌড় তার চেয়ে বেশী ছিল না। তাঁদের আর্ট পাশ্চাত্য আদর্শে
১১