মজুমদার ও শ্রীনীরদ চৌধুরী প্রভৃতি তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। আমি তখন “নাচঘর” পত্রিকার সম্পাদক।
“ভারতী” সবে উঠে গিয়েছে। স্বর্গীয় বন্ধুবর দীনেশরঞ্জন দাশ সম্পাদকের আসনে আসীন হয়ে শ্রীপ্রেমেন্দ্র মিত্র, শ্রীঅচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, শ্রীবুদ্ধদেব বসু ও শ্রীনৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ তরুণ লেখকদের নিয়ে খুব ঘটা করে চালাচ্ছেন “কল্লোল” পত্রিকা। আমিও ছিলুম “কল্লোলের” লেখক।
“শনিবারের চিঠি”তে কিছু কিছু সুলিখিত ও সুচিন্তিত সন্দর্ভ প্রকাশিত হ’ত, কিন্তু সে বেশী ঝোঁক দিয়েছিল রঙ্গব্যঙ্গ ও সমসাময়িক পত্রিকার দোষকথনের দিকে। কোথায় কে কামজ রচনার বেসাতি করছে, “চিঠি” হ’ত তারই সন্দেশবহ। কেবল সে খবরদার হয়ে হরেক রকম টীকাটিপ্পনী কেটে কটুক্তি করত না, ঐ সঙ্গে করত সেই সব ধিক্কৃত রচনা থেকে নমুনার পর নমুনা উদ্ধার। সেই সব উদ্ধৃতির মধ্যে থাকত যে অশ্লীলতা, তা উপভোগ করবার জন্যে পাঠকেরও অভাব হ’ত না। এই ভাবে “শনিবারের চিঠি” আসর সরগরম ক’রে দস্তুরমত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
“শনিবারের চিঠি”র বাক্যবাণের প্রধান চাঁদমারি হয়ে ওঠে “কল্লোল” পত্রিকা। প্রথমে আমি রেহাই পেয়েছিলুম। কিন্তু তারপর আমার উপরেও আক্রমণ সুরু হ’ল। গদ্যে ও পদ্যে—অত্যন্ত ঝাঁঝালো ভাষায়। আদিরস পরিবেশনের জন্যে আমি আক্রান্ত হইনি। তাই মনে হয় আমার একমাত্র অপরাধ ছিল আমি “কল্লোলের” লেখক। সঙ্গদোষে আমিও হয়েছিলুম “নষ্ট”।
অবশেষে আমিও মৌনব্রত ভঙ্গ করতে বাধ্য হলুম এবং অন্যপক্ষও একই খেলা খেলতে পারে দেখাবার জন্যে “নাচঘরে” খুললুম “রংমহলের পঞ্চরং” নামে একটি নূতন বিভাগ। গদ্যে ও পদ্যে দিতে লাগলুম পাল্টা জবাব। অচিন্ত্যকুমার প্রমুখ কয়েকজন কবি ও লেখক স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে আমাকে অল্পবিস্তর সাহায্য করেছিলেন বটে, কিন্তু “নাচঘরে”র অধিকাংশ রচনা ছিল আমারই লেখনীপ্রসূত। ‘চিঠি’র ব্যঙ্গকবিতাগুলির রচয়িতা ছিলেন সজনীকান্ত। সেই লেখনীযুদ্ধ জনসাধারণের চিত্তরোচক হয়েছিল।
২৩৬