কোন ব্যক্তিগত বিদ্বেষ নয়, ব্যাপারটা সুরু হয়েছিল কৌতুকচ্ছলেই—যদিও কৌতুকটা গড়িয়েছিল যেন কিছু বেশীদূর পর্যন্ত। এবং আমার পক্ষেই সুবিধা ছিল অধিক। “শনিবারের চিঠি” মাসিক, “নাচঘর” সাপ্তাহিক। “চিঠি” মাসে একবার বচনবাণ ছাড়লে, আমি বাক্যবুলেট ছোঁড়বার সুযোগ পাই মাসে চারবার। এইভাবে চলল কিছুকাল।
প্রথমে আক্রমণ আরম্ভ ক’রে শেষটা “শনিবারের চিঠিই প্রথমে দিলে রণে ক্ষান্ত। তুষ্ণীভাব অবলম্বন করল আমারও লেখনী।
খেলাচ্ছলেই আমরা দাঁড়িয়েছিলুম পরস্পরের বিরুদ্ধে, আমাদের মধ্যে ছিল না কিছুমাত্র রেষারেষির ভাব। তাই কিছুদিন পরে যখন পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত হলুম, বেশ সহজ ও স্বাভাবিক ভাবে দুজনেই গ্রহণ করলুম দুজনকে। আমাদের বিরোধটা ছিল অভিনয় মাত্র।
আসল কথা বলতে কি, ব্যক্তিগত বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে সজনীকান্ত “কল্লোলের” দলকেও আক্রমণ করেছিলেন ব’লে মনে হয় না। সেও ছিল ভান। “শনিবারের চিঠি”র চাহিদা বাড়াবার জন্যেই তিনি তুলেছিলেন অশ্লীলতার অজুহাত। ব্যবসাদারি চাল ছাড়া আর কিছু নয়। কারণ যে শ্রেণীর রচনার জন্যে তিনি “কল্লোল”কে আক্রমণ করতেন, ঠিক সেই শ্রেণীর গল্পই প্রকাশিত হয়েছে তাঁর “শনিবারের চিঠি”তে।
“কল্লোল যুগ” গ্রন্থে অচিন্ত্যকুমার লিখেছেনঃ “পুরীতে বেড়াতে গিয়েছি বুদ্ধদেব আর আমি। আর অজিত। একদিন দেখি সমুদ্র থেকে কে উঠে আসছে। পুরাণে-মহাভারতে দেখেছি কেউ কেউ অমনি উদ্ভূত হয়েছে সমুদ্র থেকে। তাদের কারুর হাতে বিষভাণ্ডও হয়তো ছিল। কিন্তু এমনটি কাউকে দেখব তা কল্পনা ও করতে পারি নি। স্বর্গ-নৃত্য সভার কেউ নয়, স্বয়ং সজনীকান্ত।
একই হোটেলে আছি। প্রায় একই ভোজনভ্রমণের গণ্ডীর মধ্যে। একই হাস্য পরিহাসের পরিমণ্ডলে।
সজনীকান্ত বললে, কেবল বিষভাণ্ড নয়, সুধাপাত্রও আছে। অর্থাৎ বন্ধু হবারও গুণ আছে আমার মধ্যে।”
২৩৭