সঙ্গে দেখাও হ’ল এবং দুইজনেই আবার ধরলুম পুরাতন বন্ধুত্বের খেই। দুই-একদিন “কল্লোল” কার্যালয়েও হাজিরা দিলুম, কিন্তু সেখানকার আসর তখনও ভালো ক’রে জমে ওঠেনি। এ হচ্ছে ১৯২৪ কি ১৯২৫ খৃষ্টাব্দের কথা।
সেই সময়ে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন পরলোকগমন করেন। দীনেশের অনুরোধে দেশবন্ধুর তিরোধান উপলক্ষ্যে একটি কবিতা রচনা ক’রে “কল্লোল” কার্যালয়ে দিয়ে এলুম। “কল্লোলে”র জন্যে সেই আমার প্রথম রচনা। তার কিছু কাল পরে “কল্লোলে”র কার্যালয় উঠে যায় পটুয়াটোলায় এবং পত্রিকার আকারও কিছু বাড়ে। তার পৃষ্ঠায় ছাপা হয় আমার কয়েকটি কবিতা এবং দুই-একটি ছোট গল্প। “কল্লোল” কার্যালয়েও গিয়ে মাঝে মাঝে দেখা দিয়েছি। সে ঘরখানিও ছোট এবং সেখানকার বৈঠকও ছিল না আমাদের “ভারতী”র মত বড়। কিন্তু সেই অপ্রশস্ত ঘরে প্রশস্ত চিত্ত নিয়ে যে কয়েকটি তরুণ হামেসাই ওঠা-বসা করতেন, তাঁদের চক্ষে ছিল মনীষার দীপ্তি, তাঁদের মুখে ছিল সাহিত্যের বাণী এবং তাঁদের মনেও ছিল বোধ করি নিজেদের ভবিষ্য সম্ভাবনা সম্বন্ধে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত। অপরিসর জায়গার মধ্যে কোনক্রমে নিজেদের কুলিয়ে নিয়ে চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিতে দিতে কিম্বা সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে তাঁরা করতেন কলালাপ, করতেন গল্পগুজব, করতেন হাস্য-পরিহাস। জীবনের বন্ধুর যাত্রাপথে অনেক দূর এগিয়ে এসেও আজও তাঁরা নিশ্চয় ভুলতে পারেন নি পিছনে প’ড়ে-থাকা আশায় আনন্দে রঙিন সেই সুমধর দিনগুলিকে। অন্ততঃ অচিন্ত্যকুমার যে ভুলতে পারেন নি তার নজীর হচ্ছে তাঁর “কল্লোল যুগ”।
“কল্লোল” পয়সা খরচ করে বিজ্ঞাপন দিত না বটে, কিন্তু তার নাম বিশেষভাবে বিজ্ঞাপিত করবার জন্যে প্রদীপ্ত উৎসাহে নিযুক্ত হয়েছিলেন “শনিবারের চিঠি”র দল। তার ফলে লাভবান হয়েছিল উভয় পক্ষই। বেড়ে উঠেছিল দুই পত্রিকারই গ্রাহক-সংখ্যা। নানা রচনায় স্থলবিশেষ উদ্ধার ক’রে “শনিবারের চিঠি” প্রমাণিত করতে চাইলে, “কল্লোল” হচ্ছে একখানা অপাঠ্য, অতি অশ্লীল পত্রিকা। বঙ্কিমচন্দ্র কোথায় যেন এই মর্মে বলেছিলেন যে, কোন কোন দুরন্ত
২৪২