স্বামী তার নিঃস্ব ও রোগশয্যায় শায়িত। সমাজের উচ্চতর স্তরে সুনীতি ও দুর্নীতির যে বাঁধা-ধরা মাপকাঠি আছে তরুণী তার খবর রাখে না বটে, কিন্তু স্বামীকে সে ভালোবাসে। তাদেরই এক প্রতিবেশী—ধনিক ও রূপরসিক— তাদের বাড়ীতে সে আনাগোনা করে। তরুণীকে টাকার লোভ দেখায়, অর্থসাহায্য করতে রাজি হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে করে কুপ্রস্তাবও। অর্থাভাবে স্বামীর চিকিৎসা হচ্ছে না ব’লে তরুণী ধনী প্রতিবেশীর প্রেম-নিবেদন সহ্য করে এবং লীলাময়ীর মত তার সঙ্গে ফষ্টিনষ্টি করতেও ছাড়ে না। তারপর প্রেমাকাঙ্ক্ষী প্রতিবেশীর টাকায় চিকিৎসার পর স্বামীর আরোগ্য লাভ। প্রতিবেশী তখন তরুণীর দেহলাভ করতে চাইলে। তরুণী গ্রাম্য ভাষায় গালাগালি দিয়ে তাকে বিতাড়িত করলে।
গল্পটি শুনে দীনেশ বললেন, “গল্পটি বেশ ভালোই হয়েছে। কিন্তু এ গল্প তো আমার কাগজে চলবে না।”
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “কেন?”
দীনেশ সাফ জবাব দিলেন, “তুমি নারীর সতীত্ব দেখাবার চেষ্টা করেছ।”
দীনেশের এমনি সব বেয়াড়া “ফ্যাড” বা খেয়াল ছিল। হয়তো এইদিকে লক্ষ্যই রেখে “কল্লোলে”র তরুণ লেখকগণকে গল্প রচনা করতে হ’ত। কিন্তু আমার আদর্শ অন্যরকম। তাই পরে অনুরুদ্ধ হয়েও আমি দীনেশের জন্যে আর কোন নতুন গল্পে হাত দিই নি। এই রকম সব খেয়ালের ভিতরে নেই চিন্তাশীলতা, আছে দুর্বলতা। এই দুর্বলতারই সুযোগ গ্রহণ করত “শনিবারের চিঠি”।
কিন্তু তখনকার “কল্লোলে”র সেই নবীন লেখকরা আজ হয়েছেন প্রবীণ। হয়তো আগে তাঁদের কারুর কারুর রচনার ভিতরে অন্বেষণ ক’রে পাওয়া যেত অল্পবিস্তর ময়লামাটি। কিন্তু তাঁদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই সমস্ত ময়লামাটি ক্রমে ক্রমে থিতিয়ে পড়েছে নীচের দিকে এবং তাঁদের রচনাও ক্রমে ক্রমে হয়ে উঠেছে স্বচ্ছ ও নির্মল।
“কল্লোলে”র লেখকদের মধ্যে ছিলেন শ্রীঅচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, শ্রীনৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, শ্রীবুদ্ধদেব বসু, শ্রীঅজিত দত্ত, শ্রীপ্রেমেন্দ্র মিত্র, শ্রীমণীশ ঘটক (যুবনাশ্ব) ও শ্রীহেমচন্দ্র বাগচী এবং
২৪৪