পাতা:এখন যাঁদের দেখছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/২৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কল্লোলের দল

আরো কেউ কেউ। ওঁদের মধ্যে প্রথমে চারিজনের সাহিত্যসাধনা আজও আছে অব্যাহত। কিন্তু বাংলা দেশের দুর্গত সিনেমার নেশায় মেতে প্রেমেন্দ্র এখন সাহিত্য-জগতে মাঝে মাঝে উঁকিঝুঁকি মারেন মাত্র। মণীশের মধ্যে ছিল প্রভূত সম্ভাবনা, কিন্তু তিনি এখন লেখনী ত্যাগ ক’রে ব’সে আছেন। হেমচন্দ্র বাগচী বেশ কবিতা লিখতেন, কিন্তু নিষ্ঠুর নিয়তির বিধানে তিনি হন উন্মাদগ্রস্ত।

 এই প্রসঙ্গে আর এক ভাগ্যবান কবির কথা মনে হচ্ছে। নজরুল ইসলাম। আমার মত তিনিও ঠিক “কল্লোল” গোষ্ঠীভুক্ত সাহিত্যিক ছিলেন না, তবে তার সম্পর্কে এসেছেন বটে। দেশবন্ধুর তিরোধান উপলক্ষ্যে আমার সঙ্গে তাঁরও কবিতা প্রকাশিত হয়েছিল “কল্লোলে”র পৃষ্ঠায়। তার কিছুকাল পরে স্বর্গীয় কবিবর যতীন্দ্রমোহন বাগচীর আরপুলি লেনের ভবনে এক সন্ধ্যায় আহূত হয়ে গিয়ে দেখি, সেখানে উপস্থিত আছেন নজরুল ইসলাম ও “কল্লোলে”র কোন কোন সাহিত্যিক। নজরুল হার্মোনিয়ম নিয়ে গান গাইতে সুরু করলেন।

 তার আগেই আমাদের নিজস্ব আসরে নজরুলের কণ্ঠে শুনেছি অসংখ্য গান। তাঁর কণ্ঠস্বর ছিল না বটে শিক্ষিত ওস্তাদের মত, কিন্তু তাঁর আন্তরিকতার গুণে প্রত্যেক শ্রোতাই হতেন বিশেষ ভাবে আকৃষ্ট। আগে তিনি গাইতেন রবীন্দ্রনাথ ও অতুলপ্রসাদ সেন প্রভৃতির গান কিন্তু সেদিনকার আসরে গীতিকার ও সুরকার রূপে নজরুলের পরিচয় পেলুম সর্ব প্রথমে। তাঁর মুখে শুনলুম গজল গানের পর গজল গান। বাংলা দেশে গজল গান আগেও ছিল। আমাদের ছেলেবেলায় লোকের মুখে মুখে এই গজলটি শুনতুম—“কুঞ্জবনে যমুনারি তীরে, রাধা রাধা বলে কে বাঁশী বাজায়।” কিন্তু সেদিন নজরুলের রচিত যে গজলগুলি শুনলুম, তাদের গড়নও সম্পূর্ণ নতুন এবং কবিত্বেও তারা সর্ব প্রকারে সমৃদ্ধ।

 তারপর “কল্লোলে” আত্মপ্রকাশ করল নজরুলের সেই প্রখ্যাত গজলটি -“বসিয়া বিজনে কেন একা মনে, পানিয়া ভরণে চললো গোরী!” তাঁর আরো কয়েকটি গজল “কল্লোলে” প্রকাশিত হয়েছিল এবং অনতিবিলম্বেই সেগুলি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ছড়িয়ে পড়ল

২৪৫