ইসলাম, সুলেখক শ্রীধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও হাস্যরসিক দাদাঠাকুর শ্রীশরৎচন্দ্র পণ্ডিত প্রভৃতির সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয়।
নজরুল হৈ হৈ ক’রে এসেই বিপুল বিক্রমে আক্রমণ করতেন টেবিল-হার্মোনিয়ামটাকে এবং কর্ণওয়ালিশ স্ট্রীটের যানবাহন ও মুক্তজনতার বিষম গোলমাল গ্রাহ্যের মধ্যেও না এনে গেয়ে যেতেন গানের পর গান এবং গাইতে গাইতে থালা থেকে তুলে নিতেন পানের পর পান। কেবল কাঁড়ি কাঁড়ি পান নয়, আঠারো-বিশ পেয়ালা চা না পেলেও সিক্ত হ’ত না তাঁর কণ্ঠদেশ।
নজরুলের সঙ্গে প্রায়ই আসতেন একটি স্বল্পবাক তরুণ। তাঁর মাথায় লম্বা চুল, দেহ একহারা, বর্ণ শ্যাম, সাজগোজ সাদাসিধা, মুখে শালীন ভাব। নাম শুনলুম শ্রীনৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়। তাঁকে আমরা নজরুলের বন্ধু ব’লেই গ্রহণ করলুম। তাঁর অন্য কোন পরিচয় জানতুম না এবং আসরের বিখ্যাত সব গুণী জ্ঞানীর মাঝখানে তাঁর দিকে ভালো ক’রে মনোযোগ দিতেও পারি নি।
নৃপেন্দ্র ছিলেন বর্ণচোরা আমের মত। নানা আসরে এমন অনেক লোককে দেখেছি, যাঁরা উল্লেখযোগ্য গুণের অধিকারী না হয়েও বিখ্যাত ব্যক্তিদের মাঝখানে ব’সে সবজান্তার মতন এমন অনর্গল কথার খই ফোটাতে পারেন যে, সহজেই তাঁদের দিকে আকৃষ্ট হয় আর সকলের দৃষ্টি। এই মুখর মানুষগুলি যে সুচতুর, সে বিষয়ে কোনই সন্দেহ নেই। নিজেদের ঢনঢনে মস্তিষ্ক সম্বন্ধে জ্ঞান তাঁদের অত্যন্ত টনটনে। তাই বিখ্যাত ব্যক্তিদের সঙ্গে ওঠা-বসা করে তাঁদের খ্যাতির খানিকটা তাঁরা প্রতিফলিত করতে চান নিজেদের মধ্যে। বহু বিখ্যাত ব্যক্তির সঙ্গে সঙ্গে আমি দেখেছি এমনি সব হসন্ত-মার্কা জীবকে।
নৃপেন্দ্র অন্য ধরণের মানুষ। মুখের কথায় বা হাব-ভাব–ব্যবহারে কোনদিনই নিজেকে তিনি বিজ্ঞাপিত করতে কিম্বা স্বয়ং প্রধান হয়ে উঠতে চান নি। তাই কিছু দিনের আলাপের পরেও আমি পাইনি তাঁর প্রকৃত পরিচয়।
তারপর “কল্লোল” পত্রিকা প্রকাশিত হল এবং “কল্লোলে”র পৃষ্ঠার মধ্যেই আবিষ্কার করলুম যথার্থ নৃপেন্দ্রচন্দ্রকে। তাঁর চেষ্টাবর্জিত,
২৪৮