পাতা:এখন যাঁদের দেখছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/২৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
এখন যাঁদের দেখছি

ভিন্ন মার্গে। অভিনয়ে অনেকের অশিক্ষিতপটুত্ব থাকতে পারে, কিন্তু উপযুক্ত গুরুর অধীনে দীর্ঘকালব্যাপী শিক্ষাগ্রহণ না করলে কেহই শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হয় না। তেমনি যারা অভিনয়ে অভ্যস্ত, সাহিত্যসাধনা না ক’রে হঠাৎ কলম ধ’রে সেও রাতারাতি লেখক হয়ে উঠতে পারে না। এইজন্যেই প্রবাদে বলে- ‘যার কাজ তারে সাজে, অন্যের পিঠে লাঠি বাজে।’ কুস্তির মহামল্লও যুযুৎসর মল্লের সঙ্গে হাত মেলাতে রাজি হয় না—অথচ দুজনেরই কর্তব্য হচ্ছে মল্লযুদ্ধ করা। আমি স্বচক্ষে একজন ক্ষুদ্রাকায় জাপানী যুযুৎসু-বিশেষজ্ঞকে বিশ্ববিজয়ী বিপুলবপু গামাকে সম্মুখযুদ্ধে আহ্বান করতে দেখেছি, কিন্তু গামা বুদ্ধিমানের মত তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কারণ যুযুৎসুর আর কুস্তির পদ্ধতি এক নয়।

 নৃপেন্দ্রকৃষ্ণের অতুলনীয় গুণপণা দেখা যায় সন্দর্ভ রচনায় এবং জীবনচিত্রাঙ্কনে। শেষোক্ত বিভাগে তিনি কলমের রেখায় যে সব জীবনচিত্র এঁকেছেন, সেগুলি হচ্ছে বাংলা সাহিত্যের অনবদ্য ও অভিনব ঐশ্বর্য। এ শ্রেণীর আরও অনেক ছবি বাংলা দেশেই পাওয়া যাবে, কিন্তু আর কোন ছবিকারই নৃপেন্দ্রকৃষ্ণের নিকটস্থ হ’তে পারবেন না। সেগুলি কেবল সুলেখকের রচনা নয়, সেগুলি হচ্ছে উচ্চশ্রেণীর শিল্পীর রচনা। যাঁদের ভিতর ও বাহির ফুটোতে চান, সম্যকরূপে ও জীবন্ত ভাবে তিনি তা ফুটিয়ে তুলেছেন, অথচ যথাসম্ভব প্রচ্ছন্ন রেখে নিজের আর্টকে এবং বিশেষজ্ঞমাত্রই জানেন, যে আর্ট নিজেকে প্রচ্ছন্ন রাখতে পারে, তাইই হচ্ছে বড় আর্ট। যাঁদের কলমের ছবি তিনি এঁকেছেন, আবার তাঁদেরই দেখাবার চেষ্টা করেছেন এমন আরও লেখকের অভাব নেই। কিন্তু চার পৃষ্ঠাব্যাপী আলোচনার পর তাঁরা যতটুকু দেখিয়েছেন, নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ মাত্র চারটি লাইনে তার চেয়ে ঢের বেশী দেখাতে পেরেছেন। তাঁর এই নিরতিশয় ভাবগর্ভ লিপিকুশলতা বোঝাতে কি শব্দালঙ্কার ব্যবহার করব? বিন্দুর মধ্যে সিন্ধুর উপামাটা বড়ই পুরাতন হয়ে গিয়েছে। তিনি হচ্ছেন একজন অননস্যাধারণ রেখাচিত্রকার।

 প্রায় সেই সময়েই আর একজন উদীয়মান লেখকের সঙ্গে পরিচয় হয়, এখন তিনি সমধিক খ্যাতি অর্জন করেছেন। তিনি হচ্ছেন

২৫০