অপরাধে অভিযুক্ত। রবীন্দ্রনাথের রচনাকে অশ্লীল বলে প্রতিপন্ন করবার জন্যে উঠে-পড়ে লেগেছিলেন দ্বিজেন্দ্রলাল। তারপর রবীন্দ্র-ভক্তরা দেখিয়ে দিলেন অশ্লীলতায় তিনিও বড় কম যান না। দ্বিজেন্দ্রলালের মৃত্যুর অনেক পরে শিশিরকুমার যখন তাঁর “পাষাণী” নাটক মঞ্চস্থ করেন, তখন রুচিবাগীশরা এত জোরে চ্যাঁচাতে সুরু ক’রে দেন যে, রীতিমত অভিনীত হয়েও পালাটি ভালো ক’রে জমতে পারে নি।
স্বর্গীয় ঔপন্যাসিক যতীন্দ্রমোহন সিংহ অশ্লীলতার উপরে হাড়ে হাড়ে চটা ছিলেন। অশ্লীল লেখা দেখলেই কলম উঁচিয়ে তেড়ে আসতেন। অবশেষে বুড়ো বয়সে নিজেই ফেঁদে বসলেন এমন এক অশ্লীল গল্প যে, চারিদিক মুখরিত হয়ে উঠল ধিক্কারধ্বনিতে।
কল্লোল-গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোক্তা ছিলেন “শনিবারের চিঠি”র দল। অচিন্ত্যকুমার, বুদ্ধদেব ও জীবনানন্দ দাশ প্রভৃতির অশ্লীলতার প্রমাণ “শনিবারের চিঠি”তে বিতরিত হ’ত ভূরি পরিমাণে। সঙ্গে সঙ্গে এটাও অতিশয় স্পষ্টভাবেই দেখা যেতে লাগল, “শনিবারের চিঠি”তে প্রকাশিত গল্পে ও কবিতাতেও অশ্লীলতার কিছুমাত্র অপ্রতুলতা নেই। সূতরাং সবাই যখন ভূত, মিছামিছি রামনাম নিয়ে টানাটানি কেন?
কি শ্লীল, কি অশ্লীল, কে বলতে পারে? এর আগে আমার একটি গল্পের দুর্দশার কথা বলেছি। “কল্লোল” সম্পাদক সেটিকে শ্লীল ব’লে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তারপর গল্পটিকে চালান করা হয় “ভারতবর্ষ” কার্যালয়ে। সেখান থেকে সেটি ফেরত আসে অশ্লীলতার অভিযোগ বহন ক’রে। ধাঁধায় পড়লুম, নিজেই বুঝতে পারলুম না আমি কি শ্শীল কি অল্লীল? কাশীধাম থেকে এল “উত্তরা”র জন্যে লেখার তাগিদ। গল্পটিকে প্রেরণ করলুম সেইখানেই। সে শ্লীল কি অশ্লীল তা নিয়ে “উত্তরা” মাথা ঘামালে না, তাকে ছাপিয়ে দিলে বিনাবাক্যব্যয়ে। “উত্তরা”য় প্রকাশিত আমার একটি কবিতার দুটি লাইনের জন্যে গালিগালাজে বাজার সরগরম হয়ে উঠেছিল—ঐ অশ্লীলতার অপরাধেই। কিন্তু আমার সেই
২৫৫