পাতা:এখন যাঁদের দেখছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মানুষ অবনীন্দ্রনাথ

 প্রসিদ্ধ লেখক ও “ভারতী”-সম্পাদক স্বর্গীয় মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন অবনীন্দ্রনাথের মধ্যম জামাতা। তাঁর মুখে শুনেছি, গভর্নমেণ্ট স্কুল অফ আর্টসের অধ্যক্ষ হ্যাভেল সাহেব একবার কি কারণে অবনীন্দ্রনাথকে বলেছিলেন, “তুমি বড় সেণ্টিমেণ্টাল।”

 অবনীন্দ্রনাথ জবাব দিয়েছিলেন, “আমি আর্টিষ্ট, সেণ্টিমেণ্ট নিয়েই আমার কারবার। আমাকে তো সেণ্টিমেণ্টাল হ’তেই হবে।”

 এই সেণ্টিমেণ্টালিটি বা ভাবপ্রবণতাই অবনীন্দ্রনাথকে চিরদিন চালিত করেছে ললিতকলার নানা দিকে, নানা ক্ষেত্রে। যখনই তাঁর কাছে গিয়েছি, তাঁর কথা শুনেছি, তখনই উপলব্ধি করেছি, তাঁর মন সর্বদাই আনাগোনা করতে চায় ভাব থেকে ভাবান্তরে, রূপ থেকে রূপান্তরে। অলসভাবে ব’সে ব’সে দিবাস্বপ্নে মশগুল হয়ে থাকা, এ হচ্ছে তাঁর প্রকৃতিবিরুদ্ধ। সর্বদাই তিনি কোন না কোন রূপসৃষ্টির কাজ নিয়ে নিযুক্ত হয়ে থাকতে ভালোবাসেন। নিরালায় একলা বসে ছবি তো আঁকেনই, এমন কি যখন বাইরেকার আর পাঁচজন এসে তাঁকে ঘিরে বসেন তখনও তাঁর কাজে কামাই নেই, গল্প করতে করতেই পটের উপরে এঁকে যান রেখার পর রেখা। যখন ছবির পাট তুলে দেন তখন নিয়ে বসেন কাগজ ও কলম। খাতার উপরে ঝ’রে পড়ে রঙের বদলে সাহিত্যরসের ধারা। তারপর খাতা মুড়লেও কাজ বন্ধ হয় না। ছোট ছোট ভাস্কর্যের কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে থাকেন। তারও উপরে আছে অন্যরকম কাজ বা শিল্পীসুলভ খেলা। বাগানে বেড়াতে বেড়াতেও দৃষ্টি তাঁর লক্ষ্য করে, প্রকৃতি দেবী সেখানে নিজের হাতে তৈরি ক’রে রেখেছেন কত সব মূর্তি বা বস্তু। হয়তো এক টুক্‌রো শুকনো ডাল বা পালাকে দেখাচ্ছে ঠিক ডিঙার মত। অমনি সেটি সংগ্রহ করা হ’ল এবং আর একটি গাছ থেকে সংগৃহীত হ’ল মানষের মত দেখতে একটি পালা। অমনি অবনীন্দ্র-

১৩