কার্যালয়ে। স্মরণ হচ্ছে, “কল্লোল” প্রকাশিত হবার আগেই “ভারতী”র পৃষ্ঠায় যেন তাঁর একটি রচনা পাঠ করেছি।
তারপর তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছে নানা জায়গায়। এবং আমি তাঁকে অন্যতম অন্তরঙ্গ ব’লেই গ্রহণ করেছি। একহারা দেহ, রংটি কালো হ’লেও মুখে-চোখে আছে বুদ্ধির প্রাখর্য। শান্ত স্বভাব, সংলাপ শিষ্ট ও মিষ্ট। কথার ঝড় বহিয়ে দেন না, বাক্যব্যয় করেন বেশ সংযত ভাবেই।
“কল্লোল যুগ” পাঠ করলে বোঝা যায়, “শনিবারের চিঠি”র ধারাবাহিক আক্রমণ তাঁর মনকে তিক্ত ক’রে তুলেছিল। সেই সময়ে “কল্লোল” এর দলের সঙ্গে হাত মিলিয়েছি ব’লেই হোক বা অন্য যে কোন কারণে আমিও “শনিবারের চিঠি”র দ্বারা বার বার আক্রান্ত হ’তে লাগলুম। কিন্তু আমি মার খেয়ে মার স’য়ে থাকবার মানুষ নই। একই খেলা দুই পক্ষই খেলতে পারে, এটা দেখিয়ে দেবার জন্যে “নাচঘরে” খুললুম একটি বিশেষ বিভাগ। তারপর কিছুকাল ধ’রে চলতে লাগল দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল বাক্যযুদ্ধ—গদ্যে এবং পদ্যে। আমার লেখা কোন কোন ব্যঙ্গ-কবিতা নজরুল ইসলাম এবং আরো কেউ কেউ মুখস্থ ক’রে ফেলেছিলেন। অচিন্ত্যকুমারও উৎসাহিত হয়ে একদিন “নাচঘর” কার্যালয়ে এসে ছদ্মনামে লেখা একটি ব্যঙ্গ-কবিতা দিয়ে গেলেন আমার হাতে। এই বিভাগে তিনি এবং অন্য কোন কোন লেখক করেছিলেন আরো কিছু কিছু সাহায্য। ফাঁপরে পড়তে হ’ল “শনিবারের চিঠি”কে। সে হচ্ছে মাসিক, আর “নাচঘর” ছিল সাপ্তাহিক, কাজেই মাসে একবার আক্রান্ত হ’লে প্রতিআক্রমণ করবার সুযোগ পায় মাসে চারবার। “শনিবারের চিঠি” মুখবন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গেই “নাচঘরে”র এই বিশেষ বিভাগটি তুলে দেওয়া হয়। তারপর “শনিবারের চিঠি”র সম্পাদকের সঙ্গে স্থাপিত হয়েছে আমার বিশেষ বন্ধুত্বের সম্পর্ক। আমি তাঁর “দাদা”।
অচিন্ত্যকুমার কেবল প্রভূত শব্দসম্পদের অধিকারী নন, শব্দ প্রয়োগও করেন নিপুণ শিল্পীর মত। “কল্লোলে”র দলের মধ্যে ভাষা নিয়ে তিনিই বোধ করি সবচেয়ে মাথা ঘামান বা খাটান। একেবারে চাঁচাছোলা, ওজন করা, তীক্ষ্নধার ভাষা, যেখানে যা মানায়
২৫৮