খুঁজে পাওয়া যায় তাকেই। অতি-মার্জনার ও শব্দালঙ্কারের এই প্রাধান্য হয়তো সহজ সরলতার অনুকূল নয়, কিন্তু পাঠকদের চিত্তকে সমৃদ্ধ ক’রে তোলে রীতিমত।
তারপর তিনি হলেন সরকারী চাকরে। সচল পদে অধিষ্ঠিত হয়ে দেশে দেশে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। আর আমি প’ড়ে রইলুম কলকাতার একটেরে, গঙ্গার ধারে। দু’জনের মুখ-দেখাদেখি পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেল। ইতিমধ্যে তিনি যে আধ্যাত্মিকতার দিকে আকৃষ্ট হয়েছেন, সে খবর পাইনি। আচম্বিতে তাঁর অতি-আধুনিক রচনা “পরম পুরুষ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ” পাঠ করে সবিস্ময়ে উপলব্ধি করতে পারলুম সেই সত্য। শিল্পীর তুলি দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি পরমহংসদেবের অনুপম জীবনচিত্র।
স্বর্গীয় মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত (“শ্রীম”) ছিলেন পরমহংসদেবের শিষ্য এবং সমসাময়িক। ঠাকুরকে তিনি যেমনটি দেখেছিলেন ঠিক সেই ভাবেই দেখিয়েছেন তাঁর অতুলনীয় গ্রন্থ “শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃতে”। সে হচ্ছে প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা। সাদাসিধে, নিরলঙ্কার, চলতি ভাষার ভিতর দিয়ে জলজিয়ন্ত ভাবে দেখা যায় একটি বালকের মত সহজ সরল, ভাবে ভোলা, কিন্তু দিব্যজ্ঞানী ও অনন্যসাধারণ মহামানবকে। কিন্তু তিনি যে নিজে একজন উঁচুদরের সাহিত্যশিল্পী, অচিন্ত্যকুমার একথা ভুলতে পারেন নি। ঠাকুরকে তিনি সাজাতে চেয়েছেন সমুজ্জল ভাষার ঐশ্বর্য দিয়ে। দুইখানি জীবনচিত্রের মধ্যে এই হচ্ছে পার্থক্য।
এইবারেই দুই-একটি ব্যক্তিগত কথা বলি। অচিন্ত্যকুমারের সখ্য আমার কাছে সত্য সত্যই প্রীতিপ্রদ। মানুষটিকে ভালো লাগে। একদিন দুপুরে সহধর্মিণী ও দুই কন্যাকে নিয়ে কর্ণওয়ালিশ স্ট্রীট দিয়ে যাচ্ছিলুম। হঠাৎ দেখতে পেলুম গুরুদাস লাইব্রেরীর ভিতরে ব’সে আছেন অচিন্ত্যকুমার। তৎক্ষণাৎ গাড়ী থেকে নেমে প’ড়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করলুম। এবং তাঁর কোন আপত্তি আমলে না এনে সোজা গিয়ে উঠলুম চৌরঙ্গীর চাঙ্গুয়া রেস্তোরাঁয়। তারপর সপরিবারে ও বন্ধু সমভিব্যাহারে বহুক্ষণ ধ’রে চলল গল্পগুজব এবং পানাহার।
আর একদিনের কথা। আমার বাড়ীর ত্রিতলের অলিন্দই হচ্ছে
২৫৯