পাতা:এখন যাঁদের দেখছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/২৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
এখন যাঁদের দেখছি

সেক্সপিয়রের নিজের আত্মীয়দের কেউ চেনে না, কিন্তু সমগ্র বিশ্বের বাসিন্দারা হচ্ছে তাঁর আত্মীয়। বার্নার্ড শ’য়ের জীবনব্যাপী প্রোপাগাণ্ডার পরেও বিশ্বের বাসিন্দারা সেক্সপীয়রকে বয়কট করেনি। জানি ওয়াকারের ভাষায়: Born 1564, still going strong!”

 রচনার ঐ প্রসাদগুণের জন্যেই প্রেমেন্দ্র অতি অনায়াসে বড়দের আড্ডা ছেড়ে ছোটদের আসরে এসে নিজের জন্যে জায়গা ক’রে নিতে পারেন। বাজারে গুজব শুনি, ছোটদের জন্যে লেখা কেতাবের চাহিদা নাকি যথেষ্ট। তাই হয়তো কৌতূহলী হয়ে অনেকেই ছোটদের খেলাঘরে এসে মাঝে মাঝে উঁকিঝুঁকি মারেন। ফল হয় না সন্তোষজনক। শরৎচন্দ্রের একখানি এই শ্রেণীর বই আছে—আমি তার নামকরণ করেছিলুম, “ছেলেবেলার গল্প”। শরৎচন্দ্রের অন্যান্য রচনার তুলনায় এ বইখানির কাটতি আশাপ্রদ নয়। যে গল্পের রচনারীতি সাবালকদের উপযোগী, তা পরিবর্তিত না করলে নাবালকদের মনে সাড়া দেয় না। আবার এক একজন এমন লেখক আছেন, যাঁরা সাবালকদের নিয়ে কারবার করবার সময়েও স্বতঃস্ফূর্ত, সহজ ও স্বাভাবিক সরলতাটুকু ঢেকে রাখবার চেষ্টা করেন না। তাই তাঁদের সে লেখা নাবালকরাও উপভোগ করতে পারে। প্রেমেন্দ্র হচ্ছেন এই শ্রেণীর লেখক। ছোটদের জন্যে লেখবার সময়ে তিনি নিজের রচনারীতি বিশেষ পরিবর্তিত না ক’রেই দৃষ্টি রাখেন কেবল তাদের উপযোগী বিষয়বস্তুর দিকে। তাঁর ঝরঝরে প্রাঞ্জল ভাষা ছোট-বড় উভয়েরই পক্ষে উপভোগ্য।

 পটুয়াটোলা লেনে “কল্লোল” কার্যালয়ে প্রেমেন্দ্রের সঙ্গে আমার প্রথম আলাপ হয়। ছোটখাটো শ্যামবর্ণ মানুষটি, সাজগোজের ভড়ং নেই, প্রফুল্ল মুখ। তারপর এখানে-ওখানে প্রায়ই তাঁর সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ হ’তে লাগল; পরিচয়ও ক্রমেই নিবিড় হ’য়ে উঠতে লাগল। আমি তাঁকে হয়তো তেমন আকৃষ্ট করতে পারিনি, কিন্তু তিনি আকৃষ্ট করেছিলেন আমাকে। “কল্লোলে”র মাধ্যমে যে কয়েকজন সাহিত্যিকের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলুম, তাঁদের মধ্যে প্রেমেন্দ্রের সঙ্গেই বেশীবার সংযোগ স্থাপনের সুযোগ পেয়েছি।

২৬২