নাথের পরিকল্পনায় তারা পরিণত হ’ল অপূর্ব একটি প্রাকৃতিক ভাস্কর্য —কার্যে। যেন রূপকথায় বর্ণিত নদনদীর মধ্যে জলযাত্রা করবার জন্যে প্রস্তুত হয়ে আছে ছোট্ট একখানি তরণী ও তার কর্ণধার। এ তাঁর হেলাফেলার খেলা নয়, এ শ্রেণীর অনেক কাজ তাঁর সংগ্রহশালায় সাদরে সুরক্ষিত হয়েছে। তিনি এর কি একটি নাম দিয়েছিলেন ব’লে স্মরণ হচ্ছে—বোধ হয় “কাটুম-কুটুম খেলা।”
বৈষ্ণব কবি গেয়েছেন, “জনম অবধি হাম রূপ নেহারিনু, নয়ন না তিরপিত ভেল।” অবনীন্দ্রনাথও ঐ দলের মানুষ। রূপ আর রূপ—তিনি সারাক্ষণই সমাহিত হয়ে আছেন আপন রূপলোকে। মনে মনে সর্বদা এঁকে যান ছবি আর ছবি- সে সব ছবি হয়তো কোন দিন পটেও উঠবে না, কলমেও ফুটবে না, তবু পরিপূর্ণ হয়ে থাকে তাঁর মানস-চিত্রশালা।
চার-পাঁচ বৎসর আগে একদিন অবনীন্দ্রনাথের কাছে গিয়েছি। কথাবার্তা কইতে কইতে হঠাৎ বললুম, “একটুখানি লেখা দিন।”
তিনি বললেন, “কাগজ-কলম নিয়ে বোসো। আমি বলি, তুমি লিখে নাও।”
তারপর এক সেকেণ্ডও চিন্তা না করেই এবং একবারও না থেমে তিনি মুখে মুখে যে শব্দচিত্রখানি রচনা করলেন, এখানে তা তুলে দেবার লোভ সামলাতে পারলুম না:
“ময়না বললে দাদামশা ছবি আঁকবো, বেশ কথা—সবাই ঐ কথাই বলেঃ ছবি যে আঁকে সেই জানে ছবি আঁকা সহজ নয়, কিন্তু যারা দেখে তারা ভাবে এ তো বেশ সহজ কাজ! ঐ হ’ল মজা ছবি লেখার।
ময়না রং তুলি নিয়ে আঁকতে বসলো হিজিবিজি কাগের ছা—
আমি সেই হিজিবিজি থেকে কখনো কাগের ছা, কখনো বগের ছা বানিয়ে দিই, আর ছবি আঁকার প্রথম পাঠ দি ময়নাকে,যথা—
হিজিবিজি কাগের ছা
লিখে চল যা তা
লিখতে লিখতে পাকলে হাত
লেখার হবে ধারাপাত—
১৪