প্রায় তিন যুগ আগেকার কথা। তিনি বলেনঃ “যখন যে লেখা ভালো লাগতো, তক্ষণি তার অনুকরণে কিছু লিখে ফেলতে না পারলে আমি টিকতেই পারতুম না। মৌচাকের দ্বিতীয় সংখ্যায় গ্রীষ্ম-বিষয়ক একটি কবিতা বেরুলো—খুব সম্ভব হেমেন্দ্রকুমার রায়ের লেখা, আমি চটপট তার একটি নকল খাড়া ক’রে মৌচাকে পাঠিয়ে দিলুম এবং চটপট সেটি ফেরৎ এলো।”
কিন্তু আজ তাঁর নকল ক’রে লেখবার এবং লেখা ফেরৎ আসবার দিন আর নেই। পত্রিকা সম্পাদকদের কাছে তাঁর রচনা এখন মহার্ঘ্য। কেবল বাংলাতে নয়, ইংরেজীতেও তাঁর লেখার হাত রীতিমত পরিপক্ক। তিনি কেবল গল্প-উপন্যাস-কবিতা লেখেন না, বেশ লেখেন প্রবন্ধও। একসময়ে নাটক রচনাতেও হাত দিয়েছিলেন, তারপর ও-বিভাগ থেকে হাত গুটিয়ে ব’সে আছেন। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি নূতন এবং আধুনিক যুগের উপযোগী। গত যুগের সাহিত্য সম্বন্ধে তিনি তেমন শ্রদ্ধাবান নন। কিন্তু গত যুগের কোন কোন সাহিত্যিকের মতন এমন মস্ত মস্ত গ্রন্থ রচনা করতে পারেন যে দেখলে চক্ষু বিস্ফারিত হয়—তাদের মধ্যে ‘কোয়ালিটি’ ও ‘কোয়াণ্টিটি’ দুইই পাওয়া যায়, সাধারণতঃ যা দুর্লভ।
“কল্লোল” কার্যালয়ে প্রেমেনের সঙ্গে আলাপ পরিচয়ের সময়ে প্রথম দেখি বুদ্ধদেবকে। তাঁর লেখা পড়লে মনে জাগে, একটি একরোখা মানুষের মূর্তি, মুখে যাঁর ‘কুছ পরোয়া নেহি’ গোছের অদম্য ভাব। কিন্তু চেহারাটি শান্তশিষ্ট নিরীহ ধরণের, দশজনের ভিতর থেকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে না। তাঁর লেখায় যে ব্যক্তিত্ব পাই, তাঁর চেহারায় তা নেই। হাসতে হাসতে এবং কথা কইতে কইতে সিগারেটের পর সিগারেট পুড়িয়ে ছাই করেন।
ভারি সিগারেটের ভক্ত। অস্কার ওয়াইল্ডের মত তাঁর কাছেও সিগারেট বোধ করি “নিখুঁত আনন্দ”। ঐখানে তাঁর সঙ্গে আমার মিল আছে। সিগারেটের অভাব হ’লে চোখে আমি অন্ধকার দেখি। অচিন্ত্যের সঙ্গে বুদ্ধদেব একদিন আমার বাড়ীতে পদার্পণ করেছিলেন।
অচিন্ত্য বললেন, “হেমেনদার বাড়ীতে যেখানেই বসি, সেইখানেই
২৬৬